আমার মা রচনা ২০, ২৫ ও ৩০ পয়েন্ট (Class 7 থেকে HSC)

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আমার মা রচনা জেনে নিবো। পরীক্ষার্থীদের জন্য আসন্ন পরীক্ষার জন্য এই রচনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই ব্লগপোস্টে তোমাদের জন্য সহজ ও সাবলীল ভাষায় রচনা লেখা হয়েছে। আশা করি ৩০ টি পয়েন্ট নিয়ে লিখা এই রচনাটি তোমাদের ভালো লাগবে এবং পুরোটা মন দিয়ে পড়বে।

আরো দেখুনঃ অধ্যবসায় রচনা দেখুন

ভূমিকা

পৃথিবীতে সবচেয়ে আপনজন হলেন মা। শিশুকাল থেকে শৈশব পর্যন্ত সন্তানকে লালন-পালন ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা অদ্বিতীয়। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট যথার্থই বলেছেন, “আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেবে।” এই কথায় মায়ের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

মা হচ্ছেন আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তিনি ঠিক সূর্যের আলোর মতোই আমার জীবনকে আলোকিত করেন। আমার মা আমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসেন, আমার যত্ন নেন এবং জীবনের সঠিক পথ দেখান। তিনি আমার প্রথম শিক্ষক, আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু এবং আমার সবচেয়ে বড় সমর্থক।

শৈশব স্মৃতি 

যতদূর মনে পড়ে, শৈশবে মা আমাকে মুখে মুখে ছড়া শেখাতেন। তারপর শুরু হয় আমার লেখাপড়ার পর্ব। মা আমাকে কাগজ-পেন্সিল দিয়ে লেখায় উৎসাহ দিতেন। আমিও মনের খুশিতে নানারকম দাগ কেটে কেটে লেখার অভ্যাস করতাম।

এভাবেই আমার মা আমাকে লেখাপড়ার পথে অগ্রসর করিয়েছেন। স্কুলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে মা ছিলেন আমার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সাথী। আজও যথারীতি পড়াশোনার ব্যাপারে সহযোগিতা ও তদারকি মায়ের কাছ থেকেই পেয়ে চলেছি। তাই সহজভাবে বলতে গেলে, আমার মা-ই আমার সত্যিকারের শিক্ষিকা।

প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক

মা আমাদের জীবনের কেবল জন্মদাত্রী নন, তিনি আমাদের জীবনের প্রথম পাঠশালা। পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকে আমাদের ভাষা শেখা, শব্দ উচ্চারণ করা, ভালো-মন্দ পার্থক্য করা সবকিছুই মা-এর হাত ধরে শুরু হয়। তিনি আমাদের প্রাথমিক নৈতিকতা, যেমন: সত্য কথা বলা, বড়দের সম্মান করা, এবং অন্যকে সাহায্য করার মতো মূল্যবোধগুলো শিখিয়ে থাকেন।

আদর্শ গৃহিণী ও পরিবারের চালিকাশক্তি

মা হলেন বাড়ির কেন্দ্রবিন্দু, যিনি বাড়িকে একটি উষ্ণ ও নিরাপদ ‘নীড়’-এ রূপান্তরিত করেন। তিনি একজন আদর্শ গৃহিণী, যিনি পুরো পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা, খাদ্যের সংস্থান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং অর্থ ব্যবস্থাপনা সবকিছুই দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেন।

মা শুধু রান্না বা ঘর গোছানোর কাজ করেন না, তিনি প্রতিটি সদস্যের মানসিক অবস্থা বোঝেন এবং তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন।

ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রতীক

মা হলেন ধৈর্য ও সহনশীলতার এক জীবন্ত প্রতীক। একটি পরিবারকে সুসংহত রাখতে গিয়ে তাঁকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য চাপ, জটিলতা এবং মানসিক ধকল সামলাতে হয়। সন্তানের দুরন্তপনা, আবদার, অসুস্থতা, পরিবারের অর্থনৈতিক সংকট সবকিছুই মা অত্যন্ত শান্তভাবে ও অবিচল থেকে মোকাবিলা করেন।

ত্যাগের মহিমা 

মা-এর জীবনের প্রতিটি দিনই ত্যাগের গল্পে ভরা। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ, শখ, এমনকি নিজের স্বাস্থ্যকেও বিসর্জন দেন শুধুমাত্র সন্তানের সুখ ও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য। একটি নতুন জামা কেনার ইচ্ছা ত্যাগ করে সন্তানের বই কেনা, নিজের পছন্দের খাবারটি সন্তানের প্লেটে তুলে দেওয়া, বা গভীর রাতে জেগে অসুস্থ সন্তানের সেবা করা—এইসবই তাঁর নিঃস্বার্থ ত্যাগের ক্ষুদ্র উদাহরণ।

আমার জীবনে তাঁর প্রভাব

আমার ব্যক্তিত্ব, মূল্যবোধ এবং জীবনের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে আমার মায়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। আমার জীবনের প্রতিটি সাফল্য এবং ছোট ছোট অর্জন তাঁর উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণার ফসল। আমার মায়ের সাহস আমাকে নতুন ঝুঁকি নিতে সাহস যোগায় এবং তাঁর সততা আমাকে ন্যায়পরায়ণ থাকতে শেখায়।

শারীরিক ও মানসিক যত্ন 

মা তাঁর সন্তানের শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়েও অত্যন্ত সচেতন। অসুস্থতার সময় তাঁর যত্নশীল হাত আর সেবা যত দ্রুত আমাদের সুস্থ করে তোলে, তা আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

তিনি শুধু সঠিক সময়ে ওষুধ দেন না, বরং তাঁর মানসিক সমর্থন এবং উপস্থিতিই রোগমুক্তির জন্য বড় ওষুধ। কৈশোর বা যৌবনে আসা মানসিক চাপ, হতাশা বা দ্বিধাদ্বন্দ্বের সময় মা-ই প্রথম আমাদের পাশে দাঁড়ান। তিনি আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করেন এবং মানসিক সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেন, যা আমাদের সুস্থ ও শক্তিশালী মন নিয়ে বড় হতে সাহায্য করে।

শাসন ও স্নেহ 

মা-এর স্নেহ যেমন কোমল, তেমনই তাঁর শাসনও আমাদের জীবনে অপরিহার্য। মা যখন আমাদের কোনো ভুল কাজের জন্য শাসন করেন, তখন সেই শাসনের মূলে থাকে গভীর ভালোবাসা ও আমাদের ভবিষ্যৎ কল্যাণ। তিনি জানেন যে শুধু স্নেহ দিয়ে জীবনের সব বাধা পার হওয়া যায় না, তাই সঠিক সময়ে কঠোর হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সেই শাসনের পরেও তিনি এমনভাবে ভালোবাসা দিয়ে দেন যে সন্তান যেন হতাশ না হয়।

সময়ানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলার গুরুত্ব

আমার মা নিজের জীবনে অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং সময়ানুবর্তী। তাঁর কাছ থেকেই আমরা সময়ের মূল্য দিতে শিখেছি। ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজ, খাওয়া-দাওয়া এবং বিশ্রাম সবকিছুই তিনি একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে রাখেন। তাঁর এই নিয়মানুবর্তিতা আমাদের শেখায় যে জীবনে সাফল্য পেতে হলে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাপন করা কতটা জরুরি।

গল্প ও ছড়ার ভান্ডার 

ছোটবেলায় মায়ের মুখ থেকে শোনা ঘুমপাড়ানি গান, রূপকথার গল্প আর ছড়াগুলো ছিল আমাদের স্বপ্নের জগৎ। তিনি একজন দক্ষ গল্পকার। এই গল্পগুলো শুধু বিনোদন দিত না, বরং আমাদের মধ্যে কল্পনাশক্তি এবং সৃজনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করত। এসব গল্পের মধ্য দিয়েই তিনি আমাদের নৈতিকতা, সাহস, সত্যবাদিতা এবং মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলো তুলে ধরতেন।

ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা

মা আমাদের ধর্মীয় এবং নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখতে, নিয়মিত উপাসনা বা প্রার্থনা করতে এবং নিজ ধর্মের রীতিনীতি মেনে চলতে শেখান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তিনি আমাদের শেখান যে সব ধর্মই মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং সেবার কথা বলে।

আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা 

মা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবনই আমার কাছে এক খোলা বই। কঠিন সময়ে তাঁর মানসিক দৃঢ়তা, কখনোই হাল না ছাড়ার মানসিকতা এবং প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করার সাহস আমাকে অনুপ্রাণিত করে। যখন আমি কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই, তখন আমি মায়ের কথা ভাবি, যিনি সবকিছু সামলে নিয়েছেন।

একজন বিশ্বস্ত বন্ধু 

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মা আমার কাছে বন্ধুর মতো হয়ে ওঠেন। এমন অনেক ব্যক্তিগত কথা বা সমস্যা থাকে, যা অন্য কারও সঙ্গে আলোচনা করা সম্ভব হয় না, কিন্তু মা-এর কাছে আমি সবকিছু নির্দ্বিধায় বলতে পারি। তিনি কোনো বিচার বা সমালোচনা ছাড়াই মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শোনেন এবং সঠিক পরামর্শ দেন। তিনি আমার অনুভূতিকে সম্মান করেন এবং আমার সব গোপন কথা বিশ্বস্ততার সাথে রক্ষা করেন। এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমাদের বন্ধনকে আরও গভীর ও মজবুত করে তুলেছে।

প্রকৃতির প্রতি তাঁর আগ্রহ 

আমার মা প্রকৃতিকে ভালোবাসেন এবং পরিবেশের প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ আছে। তিনি বাড়ির আশেপাশে গাছ লাগানো, ফুলের যত্ন নেওয়া এবং পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে সচেতন। তাঁর এই অভ্যাস আমাদের মধ্যেও প্রকৃতিপ্রেম এবং পরিবেশ সুরক্ষার দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করে।

তিনি আমাদের শেখান যে প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কত গভীর এবং কীভাবে প্রকৃতি আমাদের জীবনকে সুন্দর করে তোলে। তাঁর এই ভালোবাসা আমাদের মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।

আর্থিক দিক সামলানো

মা হলেন পরিবারের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একজন বিচক্ষণ পরিচালক। তিনি সীমিত সম্পদ দিয়েও কীভাবে সংসার চালাতে হয়, সেই বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ। বাজেটের মধ্যে থেকে সবকিছু পরিচালনা করা, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো এবং ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করার কৌশল তিনি আমাদের শেখান।

সরলতা ও মহৎ হৃদয় 

আমার মা অত্যন্ত সরল প্রকৃতির এবং তাঁর হৃদয় অত্যন্ত দয়ালু ও মহৎ। তিনি দাম্ভিকতা এবং লোকদেখানো জীবন থেকে দূরে থাকেন। তাঁর এই সরলতা তাঁকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। তিনি সবসময় অন্যের বিপদে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করতে ভালোবাসেন এবং দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ান।

স্বাস্থ্য সচেতনতা

মা আমাদের স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর ও সচেতন। সঠিক সময়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এইসব বিষয়ে তিনি কড়া নজর রাখেন। তাঁর যত্নেই আমরা ছোটবেলা থেকে রোগমুক্ত ও সুস্থ জীবন যাপন করতে শিখেছি।

নান্দনিকতা ও পরিপাটিতা 

মা তাঁর চারপাশটা সুন্দর, পরিপাটি এবং রুচিসম্মতভাবে সাজিয়ে রাখতে ভালোবাসেন। বাড়ির সাজসজ্জা, পোশাক-পরিচ্ছদ বা ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে তাঁর এক বিশেষ নান্দনিকতা দেখা যায়। তাঁর এই রুচিবোধ আমাদের মধ্যেও সৌন্দর্যবোধ এবং পরিচ্ছন্ন জীবন যাপনের অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তিনি শেখান যে বাইরের সৌন্দর্য নয়, বরং ভেতরের পরিচ্ছন্নতাই আসল।

হাসি ও আনন্দ: বাড়ির প্রাণ

মা-এর এক চিলতে হাসি বাড়ির সবার মন ভালো করে দেয়। তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থিতি এবং ইতিবাচক কথাগুলো পুরো পরিবারে আনন্দের আবহ তৈরি করে। মা আমাদের বাড়ির আনন্দের প্রধান উৎস। তাঁর হাসিখুশি স্বভাব আমাদের শেখায় যে জীবনের ছোট ছোট জিনিসগুলোতেও কীভাবে আনন্দ খুঁজে নিতে হয়। তাঁর ইতিবাচকতা আমাদের জীবনকে সহজ ও সুন্দর করে তোলে।

ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর স্বপ্ন

মা-এর সব স্বপ্নই আমাদের কেন্দ্র করে। তাঁর ব্যক্তিগত কোনো বড় আকাঙ্ক্ষা নেই; আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং সাফল্যই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আমাদের উচ্চ শিক্ষা, ভালো চাকরি, সুস্থ জীবন এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এইসবই তাঁর মূল লক্ষ্য। আমাদের প্রতি তাঁর এই নিঃস্বার্থ স্বপ্নই তাঁকে জীবনের সব কঠিন পথ অতিক্রম করতে সাহস যোগায়।

ভুল সংশোধনের পদ্ধতি

মা যখন আমাদের কোনো ভুল ধরিয়ে দেন, তখন তা অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা ও ভালোবাসার সঙ্গে করেন। তিনি সরাসরি সমালোচনা না করে এমনভাবে আলোচনা করেন, যাতে আমরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারি এবং তা শুধরে নেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হই। তিনি আমাদের শেখান যে ভুল করা স্বাভাবিক, কিন্তু ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর এই গঠনমূলক সমালোচনা পদ্ধতি আমাদের আত্মবিশ্বাস না ভেঙে বরং আত্ম-উন্নয়নে সাহায্য করে।

একজন নারী হিসেবে তাঁর পূর্ণতা

মা কেবল একজন মা নন, তিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি ভূমিকায় স্ত্রী হিসেবে, কন্যা হিসেবে, এবং সর্বোপরি একজন মানুষ ও নারী হিসেবে অত্যন্ত সার্থক এবং পরিপূর্ণ। তিনি তাঁর ব্যক্তিত্ব, দৃঢ়তা, প্রেম, সেবা, ত্যাগ ও শক্তি দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে একজন নারী একই সাথে কোমল এবং শক্তিশালী হতে পারেন। তাঁর এই পরিপূর্ণতা আমাদের জন্য এক বিশাল গর্ব এবং অনুপ্রেরণা। তিনি তাঁর জীবন দিয়ে আমাদের শিখিয়েছেন, জীবনের সব দায়িত্ব ও কর্তব্য কীভাবে হাসি মুখে পালন করতে হয়।

দুঃখের সময়ে

আনন্দের দিনে মা’কে আমরা যেভাবে দেখি, দুঃখের দিনে তাঁকে দেখি এক সম্পূর্ণ ভিন্ন মূর্তিতে। আমাদের যখন অসুখ-বিসুখ হয়, তখন মা-ই যেন সবচেয়ে বেশি দুঃখ ভোগ করেন। আহার-নিদ্রা ত্যাগ করে সারাক্ষণ তিনি আমাদের শুশ্রূষায় ব্যস্ত থাকেন।

ডাক্তার ডাকা, ওষুধ আনা, পথ্য দেওয়া এই সব কাজই তিনি সতর্ক দৃষ্টিতে করানোর ব্যবস্থা করেন। এমনকি আমরা সুস্থ থাকা সত্ত্বেও, যদি সময়মতো বাসায় না ফিরি, তবে আমার মায়ের উৎকণ্ঠার অন্ত থাকে না।

আনন্দের দিনে 

দুই ভাইয়ের মধ্যে আমি ছোট। আমাদের কোনো সাফল্যের সংবাদ জানতে পারলে আমার মা খুবই খুশি হন। একবার আমার বড় ভাই যখন স্টারমার্ক পেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন, তখন আমার মা-ই বোধ করি পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন।

আরেকদিনের ঘটনা, আমি যেদিন স্কুলে কবিতা আবৃত্তির প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পেলাম, সেদিন মায়ের আনন্দ আর ধরে না। এ ছাড়াও, আমার বৃত্তি লাভের সংবাদে মা তো খুশিতে মিষ্টি বিতরণের উৎসব করে ফেললেন।

লেখাপড়ায় মায়ের সহযোগিতা

আমার মা সারাদিন সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকলেও আমার লেখাপড়ার দিকে তাঁর বিশেষ নজর থাকে। অবসর পেলেই তিনি যত্ন সহকারে আমার জন্য বিভিন্ন বিষয়ের নোট তৈরি করে দেন। পরীক্ষায় আমি যাতে ভালো ফল করতে পারি, মা সবসময় সেই চেষ্টা করেন। এছাড়া, বইপত্র গুছিয়ে রাখতে তিনি আমাকে সর্বদা সহযোগিতা করেন এবং নিয়মিত স্কুলে আসা-যাওয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।

মায়ের ত্যাগ ও ভালোবাসা

আমার মায়ের ভালোবাসা অসীম এবং আমার জন্য তাঁর ত্যাগ অপরিসীম। আমি যখন অসুস্থ হই, তিনি সারারাত জেগে আমার পাশে থাকেন, কপালে হাত বুলিয়ে দেন এবং আমার জন্য প্রার্থনা করেন। আমার পছন্দের খেলনা বা জামা কিনে দিতে তিনি নিজের শখ-আহ্লাদগুলোও দমিয়ে রাখেন।

আমি যেন ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারি এবং জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারি, সেজন্য তিনি আমাকে সবসময় উৎসাহ দেন। তাঁর এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি। মা আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে সব পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরতে হয় এবং কঠিন সময়েও হাসিমুখে থাকতে হয়।

অবসর যাপন

সংসারের কাজে আমার মা’কে সারাদিনই ব্যস্ত থাকতে হয়। তবে দুপুরের খাবারের পর সামান্য বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে দৈনিক পত্রিকা পড়া তাঁর একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া, গল্পের বই পড়া এবং টেলিভিশনে নাটক দেখার প্রতিও তাঁর প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। মা দু-একবছর পর পর অজানা ঐতিহাসিক স্থান পরিভ্রমণ করেন, আর এই সুযোগে আমিও বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের আনন্দ পাই।

আমার মায়ের প্রতি আমার কর্তব্য

আমি আমার মাকে হৃদয়ের গভীর থেকে ভালোবাসি। তাঁর জন্য আমার মনে অসীম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা রয়েছে। আমি বড় হয়ে এমন একজন মানুষ হতে চাই, যাতে আমার মা আমার জন্য গর্ববোধ করেন। আমি সবসময় তাঁর কথা মেনে চলি এবং তাঁকে খুশি রাখার চেষ্টা করি।

প্রতিদিন আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন আমার মা সুস্থ, সুখী এবং দীর্ঘজীবী হন। আমি বড় হয়ে তাঁর সব ইচ্ছা পূরণ করতে চাই এবং তাঁর মুখে হাসি ফোটাতে চাই। আমার মা আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।

উপসংহার 

মা হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে মহৎ উপহার। আমার মা আমার জীবনের আলো এবং শক্তি। তাঁর ভালোবাসা, যত্ন এবং শিক্ষা ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। তিনি আমার জন্য শুধু মা নন, আমার জীবনের প্রধান প্রেরণা। আমি সবসময় তাঁর কথা মানব এবং তাঁকে সুখী রাখব। আমার মা আমার কাছে আল্লাহর দেওয়া একটি আশীর্বাদ, যিনি আমার জীবনকে পরিপূর্ণ করেছেন।

বলা হয়, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। পৃথিবীতে মায়ের চেয়ে আপন আর কেউ নেই। আমাদের সকলের উচিত মাকে যেন কখনও কোনোরূপ কষ্ট না দিই। বড় হয়ে আমরা যেন সবাই মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি এবং মায়ের আদর থেকে যেন আমরা কেউ বঞ্চিত না হই।