বিদায় হজ রচনা ৫ম শ্রেণি – মহানবি (স.) এর শেষ ভাষণ

ইসলামের ইতিহাসে বিদায় হজ হলো এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় ঘটনা। এটি নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনের শেষ হজ এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি চিরন্তন শিক্ষা। বিদায় হজের সময় তিনি মুসলমানদের উদ্দেশ্যে শেষ বাণী প্রদান করেন, যা আজও আমাদের ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক সম্পর্ক এবং নৈতিক মানদণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়। 

৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীর দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সহজভাবে বোঝা যায় যে, বিদায় হজ কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং এটি মানবতার মূল্যবোধ, ন্যায়, সমতা ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। তাই আমরা আজ ৫ম শ্রেণির জন্য এই রচনাটি নিয়ে হাজির হয়েছি। 

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের প্রকৃতি রচনা ৪র্থ শ্রেণি

বিদায় হজ রচনা ৫ম শ্রেণি

এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা ৩ টি রচনা উপস্থাপন করতে চলেছি। আমরা যৌথভাবে যে তিনটি রচনা তৈরি করেছি, সেগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল জ্ঞান, নৈতিকতা এবং ভাষার সরলতার মধ্যে একটি সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা।

রচনা -১ 

ভূমিকা

বিদায় হজ ছিল হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনের এক বিশেষ ও স্মরণীয় ঘটনা। এই হজে তিনি মুসলিম উম্মাহকে উদ্দেশ করে শেষ বাণী প্রদান করেন, যা ইসলামের ইতিহাসে স্থায়ীভাবে গুরুত্ব ধরে রেখেছে। তাঁর কথাগুলো শুধু সে সময়ের জন্য নয়, বরং সকল যুগের মানুষের জন্য পথনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হয়।

সময় ও স্থান

বিদায় হজ সম্পন্ন হয় হিজরি দশম সালে, নবীজীর জীবনের শেষ সময়ে। এই গুরুত্বপূর্ণ হজের মূল পর্ব অনুষ্ঠিত হয় মক্কার নিকটবর্তী আরাফাত ময়দানে। সেদিন পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অসংখ্য মুসলমান হজের নিয়ম কানুন পালন করে সেখানে জমায়েত হয়েছিলেন।

শেষ ভাষনের প্রধান বিষয়

আরাফাতের ময়দানে দেওয়া নবীজীর (সা.) বাণীতে মানবতার মৌলিক শিক্ষা তুলে ধরা হয়। তিনি ঘোষণা করেন যে বর্ণ, গোত্র বা উপজাতির ভিত্তিতে মানবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই; পরহেজগারি ও সৎকর্মই মানুষের মূল্য। তিনি নারীদের অধিকার রক্ষা, তাদের প্রতি দয়া ও সুবচন ব্যবহারের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মুমিনদের পরস্পরের প্রতি ভালো ব্যবহার, অন্যায় থেকে দূরে থাকা এবং হালাল হারামের বিধান মেনে চলার কথা জোর দিয়ে বলেন।

শিক্ষণীয় দিক

বিদায় হজের ভাষণ আমাদের ন্যায়বিচার, সমতা ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে একজন মুসলিমকে সত্যবাদী, বিশ্বস্ত, দয়াশীল এবং দায়িত্বশীল হতে হবে। সামাজিক বন্ধন দৃঢ় রাখা, অন্যের অধিকার আদায় করা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠাও এই ভাষণের অন্যতম শিক্ষা।

উপসংহার

বিদায় হজের শেষ ভাষণ মুসলমানদের জন্য এক চিরন্তন আদর্শ। হযরত মুহাম্মদ (সা.) মানুষের জন্য যে উত্তম জীবনব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন, তা অনুসরণ করলে ব্যক্তি জীবন যেমন সুন্দর হয়, তেমনি সমাজও শৃঙ্খলাপূর্ণ ও শান্তিময় হয়। তাই তাঁর শিক্ষাকে হৃদয়ে ধারণ করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।

রচনা – ২ 

ভূমিকা

বিদায় হজ ইসলামের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনের শেষ হজ। এই হজে তিনি সমস্ত মুসলমানদের উদ্দেশে শেষ বাণী দেন। তাঁর শিক্ষাগুলো আমাদের জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত।

হজের সময় ও স্থান

বিদায় হজ অনুষ্ঠিত হয় নবীজীর জীবনের শেষ বছরে, মক্কার আরাফাত পাহাড়ে। সারা বিশ্বের মুসলিমরা হজের সব রীতিনীতি পালন করতে সেখানে উপস্থিত হন।

শেষ বাণীর মূল বক্তব্য

হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, সকল মুসলমান সমান। মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সবাইকে সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও ভদ্র হতে হবে। নারীদের অধিকার রক্ষা করতে হবে এবং একে অপরের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া হালাল ও হারাম সম্পর্কে সতর্ক থাকার শিক্ষা দেন।

আমাদের শেখা

এই ভাষন আমাদের শেখায় যে আমরা সব সময় সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ ও দয়ালু হতে হবে। সমাজে শান্তি ও সংহতি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার

বিদায় হজের শেষ ভাষন মুসলিমদের জন্য চিরন্তন শিক্ষা। হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নির্দেশ অনুসরণ করে আমরা সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও দয়ালু হয়ে জীবন যাপন করতে পারি। এটি আমাদের জীবনের জন্য একটি মূল্যবান দিকনির্দেশ।

রচনা – ৩

ভূমিকা

বিদায় হজ ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য এবং মহিমান্বিত অধ্যায়। এটি ছিল নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের শেষ আনুষ্ঠানিক হজ এবং মানবজাতির প্রতি তাঁর চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা। এই ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি তাঁর উম্মাহকে এমন কিছু চিরন্তন শিক্ষা ও নৈতিক ভিত্তি দিয়ে যান, যা কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য জীবন ধারণের আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে।

মহাপ্রাঙ্গণ আরাফাত

বিদায় হজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল হিজরি দশম সনে, অর্থাৎ নবীজীর জীবনের শেষ বছরে। ইসলামের ইতিহাসে এত বিশাল জনসমাগম এর আগে ঘটেনি। এই হজ মানবজাতির মধ্যে সাম্য, মিলন ও ঐক্যের এক অভূতপূর্ব প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

শেষ ভাষণ

হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর ভাষণে মানবতার এক পূর্ণাঙ্গ সনদ ঘোষণা করেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, আল্লাহ্‌র দৃষ্টিতে সকল মানুষ সমান; ধনী-দরিদ্র, সাদা-কালো, আরব-অনারব, জাতি বা সামাজিক অবস্থান কোনটিই কাউকে শ্রেষ্ঠ করে না। শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র মাপকাঠি হলো তাকওয়া। তিনি বিশেষভাবে নারীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার উপর জোর দেন এবং সকল প্রকার সুদ, রক্তপাত ও অন্যায় নিষিদ্ধ করেন। 

উম্মাহর দায়িত্ব

বিদায় হজের এই শিক্ষা আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। এই ভাষণের প্রতিটি বাণী আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, একটি শান্তিময় ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা প্রতিটি মুসলিমের ধর্মীয় ও নৈতিক কর্তব্য। মহানবীর (সা.) শিক্ষা অনুসরণ করে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ ও ধৈর্যশীল হওয়া অপরিহার্য।

উপসংহার

বিদায় হজের শেষ ভাষণ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অফুরন্ত শিক্ষার ভাণ্ডার ও আলোর দিশারী। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর এই কালজয়ী বাণীগুলো কেবল ধর্মীয় উপদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলো বিশ্বজনীন মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার ও উন্নত চরিত্রের ভিত্তি। এই মূল্যবান উপদেশমালা অনুসরণ করে আমরা আমাদের চরিত্র গঠনে সফল হতে পারি এবং সমাজে সত্যিকারের শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে পারি।

Farewell Hajj essay

পরিশেষে

৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বিদায় হজ নিয়ে রচনা তৈরি করার ক্ষেত্রে আমরা ঐতিহাসিক সত্যকে নৈতিক শিক্ষার সঙ্গে মিশিয়ে অত্যন্ত সহজবোধ্য এবং আকর্ষণীয় রূপে উপস্থাপন করেছি, যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও রচনার মান উভয়কেই উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করতে সহায়তা করবে।