সুন্দরবনের প্রাণী রচনা পঞ্চম শ্রেণি – খুবই সহজ ভাষায়
সুন্দরবন বাংলাদেশের এক অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ। এই বিশাল ম্যানগ্রোভ বন শুধু তার সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, বরং অসংখ্য প্রাণীর আশ্রয়স্থল হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। আমাদের ওয়েবসাইটে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সুন্দরবনের প্রাণীভিত্তিক একাধিক রচনা তুলে ধরা হয়েছে, যাতে তারা সহজভাবে প্রকৃতি, বনজ প্রাণী ও পরিবেশ সম্পর্কে জানতে পারে।
আমাদের রচনাগুলোতে সহজ শব্দ, ছোট বাক্য এবং বোধগম্য ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষার প্রস্তুতিতেই নয়, জ্ঞান বৃদ্ধিতেও এটি কাজে লাগাতে পারে। তারা বুঝতে পারে সুন্দরবন কীভাবে মানুষের জীবন ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি প্রাণীদের প্রতি মমত্ববোধ ও পরিবেশ সুরক্ষার শিক্ষা শিশুকাল থেকেই গড়ে ওঠে।
আরও পড়ুনঃ আসল নির্ণয়ের সূত্র ৫ম শ্রেণি
৫ম শ্রেণিতে সুন্দরবনের প্রাণী রচনা কেন পড়ানো হয়?
৫ম শ্রেণিতে সুন্দরবনের প্রাণী রচনা রাখা হয়েছে প্রধানত ছোট শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বাড়ানোর জন্য। ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সাধারণত পাঠ্যবই ছাড়াও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চায়। তাই সুন্দরবনের বাঘ, হরিণ, বানর, কুমির বা বিভিন্ন পাখির মতো প্রাণীদের সম্পর্কে বৈচিত্র্যময় তথ্য তাদের কৌতূহল জাগিয়ে তোলে।
রচনাগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে শিশুদের প্রাণীজগৎ সম্পর্কে আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং তারা প্রকৃতি সংরক্ষণের গুরুত্বও বুঝতে শেখে। এছাড়া বাংলাদেশের এমন একটি সম্পদ ও প্রাকৃতিক নিদর্শন সম্পর্কে জানা উচিত প্রতিটি শিক্ষার্থীর।
সুন্দরবনের প্রাণী রচনা পঞ্চম শ্রেণি
আমাদের ওয়েবসাইটে উপস্থাপিত প্রতিটি রচনায় ভিন্ন ভিন্ন উপশিরোনাম দিয়ে লেখা হয়েছে, যাতে রচনাগুলো একঘেয়ে না লাগে। কোনো রচনায় বাঘকে কেন্দ্র করে বলা হয়েছে, কোনো রচনায় হরিণ বা জলজ প্রাণীর কথা উঠে এসেছে। আবার কোথাও প্রাণীর বাসস্থান, খাদ্যাভ্যাস, উপকারিতা বা পরিবেশ রক্ষায় তাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ পর্যায়ে আমরা ৩ টি রচনা উপস্থাপন করছি যাতে শিক্ষার্থীরা তাঁদের পছন্দমত যেকোনো একটি রচনা অধ্যায়ন করতে পারে।
রচনা – ১
ভূমিকা:
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক মনোরম দেশ। এখানে আছে নদী, পাহাড়, সমুদ্র ও বন – প্রকৃতির সব রূপই যেন একসঙ্গে মিলেমিশে রয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবন আমাদের দেশের সবচেয়ে বিস্তৃত বনাঞ্চল। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে অন্যতম এবং প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি অমূল্য ধন।
অবস্থান:
সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার কিছু অংশজুড়ে এই বন বিস্তৃত। তবে প্রধানত সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলাই সুন্দরবনের মূল এলাকা হিসেবে পরিচিত।
আয়তন:
সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় দশ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশ ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো বনভূমির প্রায় ৬২ শতাংশ। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এই বন দেশের জলবায়ু ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উদ্ভিদ:
সুন্দরবনে অসংখ্য উদ্ভিদের সমাহার দেখা যায়। এখানে সুন্দরী, গেওয়া, গরান, কেওড়া, ধুন্দলসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ জন্মায়। গোলপাতা সুন্দরবনের অন্যতম বিশেষ গাছ, যা উপকূলীয় মানুষের জীবনে বিভিন্নভাবে কাজে লাগে। প্রধানত সুন্দরী গাছের আধিক্যের কারণেই বনটির নাম হয়েছে ‘সুন্দরবন’।
প্রাণী:
এই বনে বিচরণ করে বহু বন্যপ্রাণী। রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাণী। এছাড়া চিত্রা হরিণ, বুনো শূকর, বানর, শেয়াল ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এখানে বাস করে। নদী ও খালে রয়েছে কুমির, হাঙর, ডলফিন এবং নানা প্রজাতির মাছ, যা বনের প্রাণিকূলকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
সুন্দরবন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সুন্দরী গাছের কাঠ নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়। গেওয়া গাছ থেকে কাগজ ও দিয়াশলাই তৈরির কাঁচামাল পাওয়া যায়। ধুন্দল কাঠ পেন্সিল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। গরান গাছের বাকল চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে কাজে লাগে, আর গোলপাতা ঘরের ছাউনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া সুন্দরবন থেকে প্রচুর মধু ও মৌমাছির মোম সংগ্রহ করা হয়, যা দেশের আয়ের উৎস হিসেবে পরিচিত।
উপসংহার:
সুন্দরবন বাংলাদেশের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও অর্থনীতিতে অপরিসীম অবদান রাখে। তাই এই অমূল্য বনভূমিকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। সুন্দরবনের সুরক্ষা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক নিরাপদ ও সমৃদ্ধ পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
রচনা – ২
ভূমিকা:
বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে বিস্তৃত সেই বিস্ময়কর অরণ্যই সুন্দরবন। এটি বিশ্বের বৃহত্তম খাঁড়িবন এবং আমাদের দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অবস্থান ও বিস্তার:
সুন্দরবন সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার ওপর বিস্তৃত। এর মূল অংশ সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত।
আয়তন ও বিস্তৃতি:
এই বৃহৎ অরণ্যের আয়তন প্রায় ১০,০০০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার এবং ভারত অংশে বাকিটা রয়েছে।
বনের বৃক্ষরাজি:
সুন্দরবনে সুন্দরী, গেওয়া, গরান, কেওড়া ও গোলপাতা সহ নানা গাছ পাওয়া যায়। সুন্দরী গাছের আধিক্যের কারণেই এই বনের নাম হয়েছে সুন্দরবন।
বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল:
এ বনে রয়েছে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, বানর, শেয়াল, উটচর প্রভৃতি প্রাণী। জলাশয়গুলোতে থাকে কুমির, ডলফিন, হাঙর ও বিভিন্ন মাছ।
অর্থনৈতিক উপকারিতা:
সুন্দরবন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কাঠ, গোলপাতা, মধু, মোম ও কাঁচামাল এখান থেকে সংগ্রহ করা হয়। এসব জিনিস দিয়ে ছাউনি, কাগজ, দিয়াশলাই, পেন্সিলসহ বহু জিনিস তৈরি হয়।
উপসংহার:
সুন্দরবন শুধু বন নয়, এটি আমাদের পরিবেশ, অর্থনীতি ও জীববৈচিত্র্যের অভিভাবক। তাই এই বন রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। কারণ সুন্দরবন আছে বলেই এখনো আমরা বড় কোন দুর্যোগ এর হাত থেকে বেঁচে আছি।
রচনা – ৩
ভূমিকা:
বাংলাদেশ প্রকৃতির অনন্য সৃষ্টিতে সমৃদ্ধ। এর মধ্যেই সুন্দরবন অন্যতম। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে পরিচিত এবং আমাদের দেশের গর্ব।
সুন্দরবনের অবস্থান:
সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনার বিশাল এলাকা জুড়ে এই বন বিস্তৃত।
পরিমাপ ও ভৌগোলিক আয়তন:
মোট আয়তন প্রায় ১০,০০০ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের অংশ ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো বনের ৬২ শতাংশ।
বৃক্ষশ্রেণি:
সুন্দরবনে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী, গরান, গেওয়া, কেওড়া ও গোলপাতা গাছ জন্মে। সুন্দরী গাছের আধিক্যের জন্যই এই বনের নাম হয়েছে সুন্দরবন।
বন্যপ্রাণী সম্পদ:
রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ। এছাড়া চিত্রা হরিণ, বানর, বন্য শূকর, শিয়ালসহ অসংখ্য প্রাণী আছে। নদী ও খালে দেখা যায় কুমির, ডলফিন, হাঙর ইত্যাদি জলজ প্রাণী।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
এ বনের কাঠ, গোলপাতা, মধু, মোমসহ বিভিন্ন পণ্যের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক। কাগজ, দিয়াশলাই, নির্মাণকাজ ও পেন্সিল তৈরির কাঁচামালও এখান থেকেই পাওয়া যায়।
উপসংহার:
সুন্দরবন বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষার ঢালস্বরূপ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই বনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। আর এজন্য সরকার এবং আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।

উপরে উল্লেখিত আমাদের প্রতিটি রচনায় সুন্দরবনের প্রকৃতি, প্রাণী ও পরিবেশ সম্পর্কিত তথ্য এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন শিক্ষার্থীরা পড়তে পড়তে শিখতে পারে। প্রথমেই রচনাগুলোতে সুন্দরবনের পরিচয় দেওয়া হয়েছে। অবস্থান, আয়তন, জলবায়ু ও উদ্ভিদের বিবরণ শিক্ষার্থীদের একটি স্পষ্ট ধারণা দেয় যে সুন্দরবন বাংলাদেশের কোথায় অবস্থিত এবং কেন এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।
এরপর প্রতিটি রচনায় উল্লেখ করা হয়েছে বনের প্রধান প্রাণীগুলোর পরিচয়।এসব তথ্য শিশুরা খুব সহজেই মনে রাখতে পারে, কারণ এগুলো আমরা ছোট বাক্য ও পরিচিত শব্দ ব্যবহার করে লেখা হয়েছে।
রচনাগুলোতে আরও আলোচনা করা হয়েছে প্রাণীদের পরিবেশগত গুরুত্ব নিয়ে।এই ধারণাগুলো শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও রচনাগুলোতে রয়েছে সুন্দরবনের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত গুরুত্ব। উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রাণী সংরক্ষণ কেবল পরিবেশের জন্য নয়, দেশের অর্থনীতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের বোঝানো হয়েছে কেন সুন্দরবনের প্রাণী রক্ষা করা জরুরি।
পরিশেষে
আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সুন্দরবনের প্রাণী রচনা পঞ্চম শ্রেণির শিশুদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয়। এগুলোর মাধ্যমে তারা শুধু প্রাণীজগত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে না, বরং পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার শিক্ষা পায়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রকৃতিপ্রেমী ও সচেতন করে তুলতে এমন রচনার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা ছোট ক্লাস থেকেই যদি এইসব সম্পর্কে জানতে পারে তাহলে তাঁদের মধ্যেও ধীরে ধীরে পরিবেশ সচেতনতা তৈরি হবে।