জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয়ের সূত্রঃ কীভাবে জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয় করা যায়?

৫ম শ্রেণি থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের বড় পরীক্ষায় যেমন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, চাকরির পরীক্ষা এবং বিসিএস এর মতো পরীক্ষায়, জনসংখ্যা ঘনত্ব সম্পর্কিত প্রশ্ন প্রায়ই আসে। এই বিষয়টি প্রথমে খুবই সহজ মনে হতে পারে। কারণ মূলত এটি একটি সরল গণিতের সূত্রের ওপর ভিত্তি করে। তবে অনেক শিক্ষার্থী ঠিকভাবে জনসংখ্যার ঘনত্ব কীভাবে নির্ণয় করতে হয় বা এর সূত্র কীভাবে প্রয়োগ করতে হয়, তা জানে না।

কখনও তারা জমির আয়তন এবং মোট জনসংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক ঠিকভাবে ধরতে পারে না, আবার কখনও সূত্র ভুলভাবে ব্যবহার করে। এর ফলে শিক্ষার্থীর নম্বর কমে যায়। নিয়মিত প্র্যাকটিস করলে তারা সহজেই যে কোনো জনসংখ্যার ঘনত্বের প্রশ্ন সমাধান করতে পারবে।

আরও পড়ুনঃ ৪র্থ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় গাইড PDF

জনসংখ্যার ঘনত্ব কাকে বলে?  

জনসংখ্যা ঘনত্ব মানে হলো কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল বা এলাকার মধ্যে মানুষ কতজন বাস করে। এটা আমাদেরকে সেই এলাকার মানুষের সংখ্যা ও বসবাসের ধরণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। জনসংখ্যা ঘনত্ব জানলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি কোন এলাকায় মানুষ বেশি, কোন এলাকায় কম, এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। আদমশুমারি করার সময় জনসংখ্যা ঘনত্বের খুব বড় গুরুত্ব থাকে। কারণ এর মাধ্যমে জানা যায় কোন এলাকায় মানুষ বেশি, কোন এলাকায় কম, এবং সরকারি পরিকল্পনা ও সাহায্য কোথায় বেশি প্রয়োজন।

জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয় করা প্রয়োজন কেন? 

ঘনত্ব বলতে কোনো বস্তুর উপাদান বা উপাদানগুলোর দৃঢ়তাকে বোঝায়। আর জনসংখ্যার ঘনত্ব হলো কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলে মানুষের সংহতভাবে বা ঘনভাবে বসবাসের মাত্রা। জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয় করা হয় যাতে আমরা জানতে পারি কোন এলাকায় মানুষ বেশি বা কম বসবাস করছে এবং জনবসতির চাপ কেমন। এটি দেশের বা এলাকার জনসংখ্যা বণ্টনের পার্থক্য বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

জনসংখ্যার ঘনত্ব সাধারণত বর্গকিলোমিটার, বর্গমাইল এ প্রকাশ করা হয়। জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয়ের জন্য কোনো এলাকার মোট জনসংখ্যাকে সেই এলাকার আয়তন বা ক্ষেত্রফলে ভাগ করতে হয়। সহজভাবে বলতে গেলে, জনসংখ্যার ঘনত্ব আমাদের বলে দেয় যে, একটি এলাকার মানুষ কত ঘনভাবে বসবাস করছে এবং সেই এলাকায় মানুষের চাপ বা চাপের মাত্রা কেমন। 

জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয়ের সূত্রঃ 

জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয় করতে হলে প্রথমে মোট জনসংখ্যাকে সেই এলাকার আয়তনের সঙ্গে ভাগ করতে হয়। সূত্রটি সহজভাবে লেখা যায় – 

জনসংখ্যার ঘনত্ব = লোকের সংখ্যা / জমির আকার (বর্গএককে)

যদি কোনো ছোট এলাকার ঘনত্ব বের করতে হয়, তখন বর্গফুট বা বর্গমিটার ব্যবহার করা যায়। ধরা যাক, একটি এলাকায় ১ বর্গকিলোমিটার জায়গায় ৬০০ জন মানুষ বাস করছে। তাহলে সেই এলাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব হবে ৬০০ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার। 

একটি দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয় করার জন্য পুরো দেশের জমির পরিমাণকে বর্গএককে পরিমাপ করা হয়। এরপর দেশের মোট জনসংখ্যাকে জমির পরিমাণ দ্বারা ভাগ করে ঘনত্ব বের করা হয়। এভাবে আমরা জানতে পারি, একটি দেশের বা অঞ্চলের প্রতি বর্গএককে কতজন মানুষ বসবাস করছে।

জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয়ের সূত্র জানা থাকলে কী কী সুবিধা হয়?

determining population density benefits

জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয়ের সূত্র জানা থাকলে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যায়, তা পয়েন্ট আকারে নিচে দেওয়া হলোঃ 

সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন: খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক চাহিদা মানুষের সংখ্যার সাথে মিলিয়ে বিতরণ করা যায়।

দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা: বন্যা, ভূমিকম্প বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা দ্রুত শনাক্ত করা যায় এবং ত্রাণ কার্যক্রম কার্যকরভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়।

আবাসন পরিকল্পনা: কোন এলাকায় বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট বেশি প্রয়োজন তা অনুমান করা সহজ হয়।

অর্থনৈতিক পরিকল্পনা: কোন এলাকায় বাজার, দোকান বা ব্যবসায়িক সুযোগ বেশি রয়েছে তা সহজে জানা যায়।

FAQs

জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয় করতে কী কী তথ্য জানা প্রয়োজন?

জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয় করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট তথ্য জানা থাকা অত্যন্ত জরুরি। যে দেশ বা অঞ্চলের জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয় করা হবে, সেখানে মোট কতজন মানুষ বসবাস করছে তা জানা প্রয়োজন। এই তথ্য সাধারণত আদমশুমারি বা সরকারি পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া যায়। ওই দেশ বা এলাকার মোট আয়তন বা ক্ষেত্রফল জানতে হবে। 

জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হলে একটি অঞ্চলে কী ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে?

জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হলে একটি অঞ্চলের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। বাসস্থান সংকট সৃষ্টি হয়; অল্প জায়গায় বেশি মানুষ বসবাস করায় ঘরবাড়ির অভাব দেখা দেয় এবং বস্তি গড়ে ওঠে। বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বৃদ্ধি পায়, কারণ কর্মসংস্থানের সুযোগ মানুষের সংখ্যার তুলনায় কম থাকে। 

জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয় আদমশুমারির জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আদমশুমারির সময় সংগৃহীত মোট জনসংখ্যা ও আয়তনের তথ্য ব্যবহার করে জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ণয় করা হলে বিভিন্ন এলাকার জনবসতির চাপ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। এর ফলে কোন এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, যোগাযোগ ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা বেশি প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করা সহজ হয়। এছাড়া জনসংখ্যার ঘনত্বের তথ্য সরকারকে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করে। 

শহর ও গ্রামের জনসংখ্যার ঘনত্বে পার্থক্য কেন হয়?

শহরে মানুষ ঘনবসতিপূর্ণ থাকে, কারণ সেখানে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বাণিজ্য ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বেশি। তাই অল্প জমিতে অনেক মানুষ বসবাস করে, যার ফলে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি হয়। গ্রামে মানুষ তুলনামূলকভাবে কম ঘনভাবে বসবাস করে। গ্রামীণ এলাকায় জমির পরিমাণ বেশি। তাই মানুষ বেশি বিস্তৃত এলাকা জুড়ে বসবাস করে।

পরিশেষে

এভাবে আমরা একটি দেশের প্রতি বর্গকিলোমিটারে কতজন মানুষ বাস করছে তা একটি সাধারণ হিসাবের মাধ্যমে জানতে পারি। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, কোনো দেশের শহরাঞ্চলে মানুষ অনেক ঘনভাবে বসবাস করে, আর গ্রামে জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। তাই শুধুমাত্র গ্রামের বা শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব দিয়ে পুরো দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এজন্য বড় আকারের অঞ্চল বা সমগ্র দেশের জন্য জনসংখ্যার ঘনত্ব হিসাব করা হয়। এতে করে শহর, গ্রাম, দেশ বা এমনকি মহাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব সম্পর্কে একটি সঠিক ও সাধারণ ধারণা পাওয়া যায়।