অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ রচনা ২০ পয়েন্ট for ssc (সহজ ভাষায়)

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ রচনা জেনে নিবো। বিশেষ করে যারা এসএসসি পরীক্ষার্থী আছো, তাদের আসন্ন পরীক্ষার জন্য এই রচনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাদের আসন্ন বিভিন্ন পরীক্ষায় এই রচনা আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

তোমরা যেন নতুন ও দারুণ কিছু পয়েন্ট সহ রচনাটি ভালোভাবে লিখতে ও শিখতে পারো, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। চলো, তাহলে আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ রচনা অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ ২০টি পয়েন্ট আমরা জেনে নিই।

আরো দেখুনঃ আমার মা রচনা ২০, ২৫ ও ৩০ পয়েন্ট

ভূমিকা

বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে এক উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর, ১৯৭১ সালে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করি। স্বাধীনতার এই ৫৪ বছরের যাত্রায়, নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।

কিছুদিন আগেও আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ যে গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তা সত্যিই নজিরবিহীন। এই অভাবনীয় অগ্রযাত্রার পেছনে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি।

অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি আকর্ষণীয় দিক হলো ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে গড় উৎপাদন প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) হার ছিল ৮.১৩ শতাংশ, যেখানে মাথাপিছু আয় ছিল ১,৯০৯ মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জিডিপির হার কিছুটা কমে ৩.৬৯ শতাংশ হলেও, মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২,৮২০ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ, প্রবৃদ্ধির হার কমলেও মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

অর্থনৈতিক এই অগ্রগতির ফলস্বরূপ, কেবল মানুষের আয় বৃদ্ধিই নয়, গড় আয়ুও বেড়েছে। জাতীয় বাজেটের আকার রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাজেট বাস্তবায়নে পরনির্ভরতা কমছে, যা একটি ইতিবাচক দিক। সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধির কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার নিম্নমুখী; বর্তমানে এই হার ২১.২ শতাংশেরও কম।

আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ সুসংহত জিডিপির হিসেবে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনায় বিশ্বের ৩৩তম স্থানে রয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় অবস্থানে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নের যেকোনো সূচকের বিচারে বাংলাদেশের এই অগ্রগতিকে অভূতপূর্ব বলা যায়।

অবকাঠামােগত উন্নয়ন

একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সবচেয়ে দৃশ্যমান দিক হলো তার অবকাঠামোগত উন্নয়ন। এই উন্নয়নের মধ্য দিয়েই দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং জনগণের জীবনমানের গতিপ্রকৃতি স্পষ্ট বোঝা যায়। সাম্প্রতিক গত এক দশকে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত অগ্রগতি সত্যিই চোখে পড়ার মতো। এই সময়ে বড়ো বড়ো প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এছাড়াও, দেশে ছোট-বড়ো অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প দ্রুততার সাথে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র,  পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর এবং ঢাকা মেট্রোরেল। এই সমস্ত অবকাঠামো যখন যথাসময়ে সম্পন্ন হবে, তখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো বাস্তবায়িত হলে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলো অর্জিত হবে দেশীয় সম্পদ ব্যবহার করে দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা সচল হবে, রপ্তানিযোগ্য পণ্যের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে,  দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং বৃদ্ধি পাবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

প্রযুক্তিগত উন্নয়ন

প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে আরও গতিশীল করে তুলছে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের কাছে সহজে সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি বিশাল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (UDC)।

দেশের মানুষের কাছে প্রযুক্তির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা নিম্নলিখিত পরিসংখ্যানে স্পষ্ট যে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে ১৮ কোটি ৫০ লাখের বেশি, যা দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায়ও বেশি। অন্যদিকে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ১৪ লাখ।

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সেবা প্রদান প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে দেশে ই-পেমেন্ট এবং মোবাইল ব্যাংকিং ব্যাপকভাবে চালু করা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন গতি আনতে ফোর-জি ও ফাইভ-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে যুগান্তকারী ঘটনা হলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ। এটি সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশের নিজস্ব সম্প্রচার উপগ্রহ। ২০১৮ সালের ১১ই মে এটি যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি ও তথ্যের মাধ্যমে দেশের সম্প্রচার কার্যক্রম বর্তমানে আরও বেশি সমৃদ্ধ হচ্ছে। এই সফল পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হচ্ছে।

মানবসম্পদ উন্নয়ন

বাংলাদেশ একটি বিপুল জনসংখ্যার দেশ। এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে জনসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার বর্তমানে কাজ করছে। সর্বস্তরে শিক্ষাকার্যক্রম নিশ্চিত করার ফলস্বরূপ একটি কর্মক্ষম ও দক্ষ জনগােষ্ঠী গড়ে উঠছে।

দক্ষ জনগােষ্ঠী তৈরির উদ্দেশ্যে সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে, নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে এবং বিশেষভাবে কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটানো হচ্ছে।

বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই কর্মসংস্থানের বহু নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। কৃষি শিল্প, তৈরি পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প সহ প্রতিটি শিল্পখাতের আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। যেমন: গত এক দশকে শুধু তথ্য-প্রযুক্তি খাতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

এছাড়াও, বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশের ১ কোটি ৫৫ লাখের অধিক শ্রমিক কর্মরত আছেন। এই প্রবাসী শ্রমিকেরা নিয়মিত তাঁদের কষ্টে উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। এভাবে বাংলাদেশের সামগ্রিক অগ্রযাত্রায় মানবসম্পদ হলো সবচেয়ে বড় প্রভাবক শক্তি হিসেবে কাজ করছে।

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার

বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তন এবং উন্নয়নে গতি আনতে হলে সর্বাগ্রে জোর দিতে হবে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে। বর্তমানে এই লক্ষ্যে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি, কলকারখানা, বাণিজ্য, ব্যাংক-বিমা ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের কাজ চলছে।

গুরুত্বপূর্ণ হলো, এসব প্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত করা হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। অর্থাৎ, যখন সারা দেশকে পুরোপুরিভাবে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে, তখনই দিন বদলের পালায় বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।

কর্মসংস্থান বৃদ্ধি

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল ও জনবহুল দেশ। এখানে দুঃখজনকভাবে কর্মসংস্থানের চেয়ে জনসংখ্যা অনেক বেশি। জনসংখ্যার তুলনায় পর্যাপ্ত কর্মক্ষেত্র না থাকায় দিন দিন বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত, অনেক শিক্ষিত বেকার কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

তাই, দিন বদলের পালায় বাংলাদেশের অগ্রগতি ও স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করার জন্য জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করা অপরিহার্য। এই রূপান্তর প্রক্রিয়া সফল করতে তিনটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে; কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উৎসাহ ও সহায়তা দান এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে বেকারদের বিভিন্ন দেশে পাঠানো।

শিক্ষা

বাংলাদেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সাক্ষরতার হার দাঁড়িয়েছে ৭৭.৯%। শিক্ষা সবার জন্য নিশ্চিত করতে সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করছে।

একই সাথে, উচ্চশিক্ষায়ও বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৯৭টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যা উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগকে বিস্তৃত করেছে।

বৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থা

প্রবাদ আছে, “শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড”, আর তাই শিক্ষার উন্নতি ছাড়া কোনো জাতির উন্নতি আশা করা যায় না। যুগে যুগে বহু মনীষী ও রাষ্ট্রনায়ক শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা মান্ধাতা-আমলের পদ্ধতিতে চলার কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে উৎকর্ষ সাধিত হয়নি।

 

সাম্প্রতিককালে, এই স্থবির অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুলে দিয়েছে সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি। এই নতুন পদ্ধতির সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার যুক্ত হওয়ায় শিক্ষণে এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন: শিক্ষকের বক্তব্য বা লেকচার ভিডিও করে ল্যাপটপের মাধ্যমে দেয়ালের সাদা পর্দায় প্রদর্শন করা হচ্ছে। এতে সহজে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যাচ্ছে।

পাঠ্যবইকে ওয়েবসাইটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, ফলে নিজস্ব বই না থাকলেও শিক্ষার্থীরা ল্যাপটপের মাধ্যমে তা সহজেই পড়ে নিতে পারছে।

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পুনরুজ্জীবন

প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের কুটির শিল্পে তৈরি পণ্যদ্রব্যের খ্যাতি ছিল বিশ্বজোড়া। বর্তমানেও আন্তর্জাতিক বাজারে এই ঐতিহ্যবাহী পণ্যের বিপুল চাহিদা বিদ্যমান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, নানা কারণে এ দেশের কুটির শিল্পের অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। এই অবস্থায় আশার কথা হলো, প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেকেই এই খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

কাজেই, দিন বদলের পালায় কুটির শিল্পের পুনরুজ্জীবন ও মানোন্নয়নের জন্য সরকারি উদ্যোগ জোরদার করা হচ্ছে। যদি এই শিল্পের যথাযথ উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয়, তবে এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেতে পারে।

কারিগরি শিক্ষার প্রসার

দিনবদলের পালায় বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যদি এ দেশের যুবসমাজ কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত হয়, তবে তারা শুধু কাজের সন্ধানই করবে না বরং নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করে নিতে পারবে।

স্বাস্থ্যসেবা

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। সরকারের গৃহীত স্বাস্থ্যনীতির ফলস্বরূপ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশে স্বাস্থ্যসেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো: প্রতি ১,০০০ জনে ১০০ জন চিকিৎসক রয়েছে।

যোগাযোগ ও পরিবহন

বাংলাদেশের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়েছে। দেশের সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন উন্নত। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-সিলেট সহ দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোর মধ্যে দ্রুতগামী বাস নিয়মিত চলাচল করছে, যা জনগণের যাতায়াতকে আরও সহজ করেছে।

শিল্প-কারখানা

বাংলাদেশে শিল্প-কারখানা স্থাপনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের ফলে দেশের শিল্প-কারখানা খাতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে: তৈরি পোশাক শিল্প, চামড়া শিল্প, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, রাসায়নিক শিল্প এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণএই বিনিয়োগের ধারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি আরও মজবুত করছে।

কৃষির উন্নতি

বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ, এবং এ দেশের সিংহভাগ মানুষ সরাসরি কৃষির সঙ্গে জড়িত। দুর্ভাগ্যবশত, এ দেশের কৃষকদের একটি বড় অংশ নিরক্ষর। ফলে তাঁরা কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারছেন না, আর তাই উৎপাদনও আশানুরূপ বাড়ছে না।

মানুষ কাজ করে মূলত খাদ্য সংস্থানের জন্য। তাই দিন বদলের প্রধান লক্ষ্য হতে হবে খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জন। এই লক্ষ্যে এবং দিনবদলের পালায় সফলতার স্বার্থে, সরকার কৃষিখাতে ভর্তুকি দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি

যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কেননা যোগাযোগ ব্যবস্থা গতিশীল ও নিরাপদ না হলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম হলো সড়ক ও নৌপথ। উভয় ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনাজনিত সমস্যা একটি বড় বাধা। দুঃখজনকভাবে, সড়ক পথে চলাচল যেমন নিরাপদ নয়, নৌপথেও তাই।

বাংলাদেশের দিনবদলের পালায় এটি একটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা। দেশের মানুষের চলাচল নিরাপদ করে দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হলে এই সমস্যার প্রতিকার অত্যন্ত প্রয়োজন।

এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এবং যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য বিপুল পরিমাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যেমন: মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং পদ্মা সেতু। এই প্রকল্পগুলো বাংলাদেশে নবদিগন্তের সূচনা করেছে।

প্রতিবন্ধকতা

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে প্রথমবারের মতো আটকে দেওয়ার চক্রান্ত হয়। এরপর বহু বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলার কারণে বাংলাদেশের অগ্রগতি স্থবির হয়ে পড়ে। একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের অগ্রগতি ছিল ধীরগতির। তবে গত এক দশকে এই অগ্রগতি অস্বাভাবিক গতি অর্জন করেছে।

তবে এই অগ্রযাত্রায় কিছু প্রতিবন্ধকতা এখনো বিদ্যমান যেমন দেশে জনসংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এই অগ্রযাত্রাকে খানিকটা ব্যাহত করে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক সৃষ্টি করে প্রতিবন্ধকতা এবং বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় দুর্নীতিও একটি বড় বাধা।

এইসব বাধা অতিক্রম করা সম্ভব হলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আরও অপ্রতিহত হবে, অগ্রগতি টেকসই হবে এবং দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।

গণতন্ত্রের সফল চর্চা

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি হয়েছে। সরকার গণতন্ত্রের চর্চা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের এই অদম্য অগ্রযাত্রায় দেশের সকল নাগরিকের অবদান রয়েছে। সরকার, জনগণ, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবীসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। দেশটি ইতোমধ্যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামীতেও বাংলাদেশের এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়।

উপসংহার 

স্বাধীনতার বহু বছর পরও বাংলাদেশ অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত উন্নতি আশানুরূপভাবে না করতে পারায় তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নতিতে যেভাবে বৃহৎ কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ এখন একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে।

বাংলাদেশের এই অদম্য অগ্রগতি যদি অব্যাহত থাকে, তবে নিকট ভবিষ্যতে বাঙালি একটি উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।