যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা ২০ পয়েন্ট HSC, SSC

“যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই” এই গুরুত্বপূর্ণ এবং সমসাময়িক বিষয়টির ওপর ভিত্তি করে আপনার HSC পরীক্ষার উপযোগী একটি রচনা লেখার জন্য নিচে ২০টি প্রধান পয়েন্ট এবং প্রতিটি পয়েন্টকে বিস্তৃত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হলো।

এই পয়েন্টগুলো ব্যবহার করে আপনি একটি সম্পূর্ণ, তথ্যবহুল ও বিশ্লেষণধর্মী রচনা পরিক্ষায় লিখতে পারবেন। তাহলে চলুন, এবার শুরু করা যাক।

যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা

আরো দেখুনঃ মানব জীবনে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট

ভূমিকা

যুদ্ধ ও শান্তি শব্দ দুটির সংজ্ঞা প্রদান করা এবং মানব জীবনে এ দুটির বিপরীতমুখী প্রভাব তুলে ধরা। যুদ্ধ হলো মানবজাতির ইতিহাসে এক ধ্বংসাত্মক বাস্তবতা, যেখানে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সংঘাতের নিষ্পত্তি হয়। অন্যদিকে, শান্তি হলো সংঘাতমুক্ত, স্থিতিশীল এবং সহাবস্থানের পরিবেশ।

দুটি বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ তাণ্ডবলীলা মানবজাতির মানবিক চেতনাকে গভীরভাবে জাগিয়ে তুলেছে। ফলস্বরূপ, আজ ক্ষুদ্র সেমিনার কক্ষ থেকে শুরু করে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ টেবিল পর্যন্ত বিশ্ব শান্তি এখন প্রধান আলোচ্য বিষয়।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক বিশ্ব পর্যন্ত যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও সভ্যতার ওপর এর ধ্বংসাত্মক প্রভাবের উদাহরণ (যেমন: বিশ্বযুদ্ধ)। ইতিহাসে অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, যেমন প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যা কোটি মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। এসব যুদ্ধ প্রমাণ করে, যুদ্ধ কেবল রাষ্ট্রীয় সংঘাত নয়, এটি মানবিক বিপর্যয়।

প্রাচীন যুদ্ধ

প্রাচীন মহাকাব্যগুলো আসলে যুদ্ধেরই কাব্য। প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রতিটি সভ্যতার অঙ্কুরোদগম হয়েছে যুদ্ধের মধ্য দিয়েই। আধুনিক সমাজের সুমহান আদর্শ যেমন স্বাধীনতা, ভ্রাতৃত্ব, মৈত্রী, সমাজবাদ এগুলো বারবার বিপ্লবের মধ্য দিয়েই নিজেদের মূল্য যাচাই করে নিয়েছে এবং শান্তির পথ খুঁজেছে।

পারমাণবিক যুদ্ধ

ষোড়শ-সপ্তদশ শতকের ধর্মযুদ্ধ বা উনিশ শতকের জাতীয়তাবাদের যুদ্ধের তুলনায় বিশ শতকের যুদ্ধ ছিল অতি নৃশংস। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাত্র বিশ বছর পরেই আবার রক্তের অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত করে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

এ যুদ্ধে জার্মান, জাপান ও ইতালি অর্থাৎ অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে মিত্রশক্তির প্রতিরোধ শান্তিকামী মানুষের গলায় জয়মাল্য পরিয়েছিল। কিন্তু ১৯৪৫ সালের সেই কলঙ্কিত দিন দুটিতেই ৬ ও ৯ আগস্ট হিরোসিমা-নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটে, যা অগণিত মানুষের বীভৎস চিতাশয্যা রচনা করে। এরপর থেকেই শুরু হয় পারমাণবিক মারণাস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা।

যুদ্ধের উৎস

হিংসা-বিদ্বেষ আর দুঃশাসনের ফলেই মানুষের মধ্যে যুদ্ধের অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত হয়। মূলত শাসক ও শোষকগোষ্ঠীর অহমিকা এবং আধিপত্য বিস্তারের স্পৃহাই মানুষের মধ্যে যুদ্ধের প্রেরণা যোগায়। কোনো দেশ শক্তিশালী হয়ে উঠলেই তারা স্বভাবতই তার প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।

যুদ্ধ কেনো বাঁধে

মানুষের জীবনে টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম অপরিহার্য। এই সংগ্রাম হলো আত্মসম্মান ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, অন্যকে ধ্বংস করার জন্য নয়। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধের রূপ হয়ে উঠেছে একে অপরকে পরাজিত ও ধ্বংস করার লড়াই। মানুষের হিংসা, দ্বেষ ও সীমাহীন লোভ-লালসা আজ তাকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে।

মানুষ তার প্রাপ্তিতে সন্তুষ্ট নয়; সে চায় আরও বেশি কিছু, চায় অন্যকে পদানত করতে। এই সম্প্রসারণবাদই আজকের বিশ্বের অধিকাংশ সংঘাত ও যুদ্ধের মূল কারণ। বিশ শতকে সংঘটিত দুটি বিশ্বযুদ্ধের মূলেও ছিল এই সম্প্রসারণশীলতা। তাই বলা যায়, যুদ্ধের প্রকৃত শিকড় লুকিয়ে আছে মানুষের অতি চাহিদা ও ক্ষমতা প্রসারের অন্ধ লালসায়।

আধিপত্যবাদীদের হিংসানীতি

সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদীদের মূল নীতিই হলো প্রভুত্ব বিস্তার করা। এক দেশের ওপর অন্য দেশের প্রভুত্ব বিস্তার করা নিয়েই বিশ্ববাসী দুটি মহাযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছে। কতিপয় আধিপত্যবাদীর উন্মত্ত প্রতিযোগিতার কারণে বিশ্ববাসীকে অশেষ দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাই বিশ্ববাসীর কণ্ঠে আজ স্লোগান উঠেছে, “আর যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।”

যুদ্ধের ভয়াবহতা

যুদ্ধের কারণে অবকাঠামো ধ্বংস, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, মুদ্রাস্ফীতি এবং দারিদ্র্যের চরম রূপ দেখা দেয়। যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়, উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সামরিক খাতে বিপুল ব্যয় হওয়ায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়নমূলক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে দেশগুলো দীর্ঘ অর্থনৈতিক সংকটে ভোগে।

যুদ্ধের সবচেয়ে করুণ পরিণতি হলো গণহত্যা, উদ্বাস্তু সংকট, নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন এবং সামাজিক কাঠামোর ধ্বংস। যুদ্ধে নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হয়, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে উদ্বাস্তু হয়, যা এক বিশাল মানবিক সংকট তৈরি করে। এর ফলে সমাজ থেকে সহমর্মিতা ও মানবিক মূল্যবোধ লুপ্ত হয়ে যায়।

যুদ্ধের প্রভাব

সামরিক কার্যক্রমের ফলে পরিবেশ দূষণ, প্রাকৃতিক সম্পদের বিনাশ এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশগত ক্ষতি ঘটে। বোমা বিস্ফোরণ, রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার এবং সামরিক যানবাহনের কারণে মাটি, জল ও বাতাস মারাত্মকভাবে দূষিত হয়। বনাঞ্চল ধ্বংস হয়, যা বাস্তুতন্ত্রকে নষ্ট করে এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর হুমকি সৃষ্টি করে।

যুদ্ধের কারণে মানুষের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক, মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মনস্তাত্ত্বিক ট্রমা বা মানসিক আঘাত বহন করে। যারা সরাসরি যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তারা পিটিএসডি (PTSD) বা যুদ্ধ-পরবর্তী মানসিক পীড়ায় ভোগে। শিশুদের মনে ভয়াবহ প্রভাব পড়ে, যা তাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠাকে ব্যাহত করে।

যুদ্ধে প্রায়শই গণতন্ত্রের পতন ঘটে, স্বৈরতন্ত্রের উত্থান হয় এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়ে। যুদ্ধের অজুহাতে সরকারগুলো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং জনগণের স্বাধীনতা হরণ করে। এতে রাজনৈতিক মতভেদ আরও তীব্র হয় এবং দেশে দীর্ঘমেয়াদী অস্থিরতা তৈরি হয়।

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

যুদ্ধ মানুষের জীবনে কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে, তার প্রমাণ হলো প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সংঘটিত এই দুটি যুদ্ধে কোটি কোটি মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এই দুটি বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৯ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ প্রাণ হারায় এবং প্রায় ১১ কোটি মানুষ বিকলাঙ্গ হয়।

এছাড়া, ৭২০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ধ্বংস হয়েছিল। পারমাণবিক বোমার আঘাতে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যে ধ্বংসলীলা সংঘটিত হয়েছে, বিশ্বমানবতা তা কখনো ভুলবে না।

সমকালীন বিশ্ব ও শান্তি

বর্তমান বিশ্বের যত জায়গায় অশান্তি ও অরাজকতা রয়েছে, তার পেছনে কলকাঠি নাড়ছে ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স ও রাশিয়া। বিশ্ব মানচিত্রে চোখ বুলালেই দেখা যায়, ইসরাঈল নামক এক জগদ্দল পাথর ফিলিস্তিনি জনগণ তথা গোটা আরব সমাজকে গ্রাস করতে চলেছে।

কাশ্মীরে চলছে নিরীহ ও স্বাধীনতাকামী মুসলমানদের ওপর আধিপত্যবাদী ভারতীয় বাহিনীর নির্যাতন। জায়ার, চেচনিয়া, ইরাক, ইরান সহ বিভিন্ন দেশে বেজে উঠেছে যুদ্ধের দামামা। তাই এখন মানবতার একান্ত আরাধ্য হলো যুদ্ধ নয়, শান্তি।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা

আজকের বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলো তাদের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে বিশ্ব মানবতাকে প্রকম্পিত করে তুলছে। যেকোনো মুহূর্তে সামান্য কোনো একটি কারণে তারা বিশ্বে তৃতীয় আরেকটি যুদ্ধ বাঁধিয়ে সমগ্র বিশ্বকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

যুদ্ধ কেন শেষ হয় না

যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ তথা জাতিসংঘ গঠিত হয়েছে। অস্ত্র সীমিতকরণ করতে অনেক চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের হাহাকার কেন?

মূলত যুদ্ধের আশঙ্কা শেষ না হওয়ার কারণ হলো, কোনো পক্ষই কাউকে মেনে নিতে পারে না এবং সর্বোপরি আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে অন্য দেশের সম্পদ হরণের লোভ।

যুদ্ধের পরিণাম

যুদ্ধের ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে অগণিত জনপদ ও অসংখ্য মানুষ। বিজ্ঞানের ব্যাপক অগ্রগতি যুদ্ধের মাধ্যমে মানুষের জীবনে নিয়ে এসেছে সর্বনাশা ও ভয়াবহ ধ্বংসলীলা। তাই আজকের দিনে যুদ্ধবিগ্রহের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী।

শক্তির সাধনায় আজকের বিশ্ব দুটি প্রধান রাষ্ট্র আমেরিকা ও রাশিয়া এর পৃথক পৃথক জোটে আবদ্ধ হয়ে আছে। নিজেদের প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য এই বৃহৎ শক্তি দুটি অনবরত যুদ্ধসাজে সজ্জিত হচ্ছে। প্রতিদিন আবিষ্কৃত হচ্ছে নিত্যনতুন মারণাস্ত্র। ফলে সারা বিশ্বে এখন অস্ত্রের ঝনঝনানি। ফিলিস্তিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মানব ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধ; আগ্রাসনী ইসরাঈল শক্তির মত্ততায় ন্যায়নীতি বিসর্জন দিচ্ছে।

আমেরিকার ইরাক ও আফগানিস্তান আক্রমণে অসংখ্য লোক নিহত হয়েছে, নষ্ট হয়েছে অনেক স্থাপত্য শিল্প, এবং গণতন্ত্রের নামে মানবতার চরম অবমূল্যায়ন ঘটেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ত্রিশ লক্ষ লোককে শহিদ হতে হয়েছে। এই সর্বনাশা যুদ্ধের পরিণাম ভয়াবহ আকারে মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে।

যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় জনপদ নিশ্চিহ্ন হয়, ফসলের বিরাট মাঠ পুড়ে আবাদের অযোগ্য হয়ে যায়। বোমার কবলে পড়ে অসংখ্য মানুষের জীবনের অবসান ঘটে। কলকারখানা, বাড়িঘর ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতির কোনো তুলনা থাকে না। এই সর্বগ্রাসী ধ্বংসলীলা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে না পারলে বিশ্বের সভ্যতার অবসান অনিবার্য।

যুদ্ধের অবসান কেন হয় না

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নিয়েছিল ‘লীগ অব নেশনস’, আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জাতিসংঘ’। উভয়ের মূল লক্ষ্য ছিল পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা হলো, বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দুর্বল দেশগুলোর ক্ষেত্রে, এই সংগঠনগুলো কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে পারেনি।

শান্তি ও নিরস্ত্রীকরণের জন্য বিশ্বজুড়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরাশক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা হিসেবে গঠিত হয়েছে ন্যাটো ও ওয়ারশ চুক্তির মতো সামরিক জোট। এছাড়াও, পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ এবং অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।

আশার আলো দেখা গিয়েছিল যখন ১৯৮৫ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান এবং সোভিয়েত নেতা গর্বাচেভ শান্তি আলোচনায় মিলিত হন। তবে দুঃখজনকভাবে, নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ছাড়তে দুই পক্ষের অনীহার কারণে সেই আলোচনা থেকে স্থায়ী শান্তি আজও অধরা রয়ে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনুন্নত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর ওপর পরাশক্তিগুলোর ক্রমাগত প্রভাব, যা শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে আরও একটি বড় বাধা।

এভাবেই বিশ্বজুড়ে মানুষের শান্তির জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকা সত্ত্বেও, নানা জটিলতার কারণে তা আজও বাস্তবে রূপ নিতে পারছে না।

বিশ্ববাসীর শান্তির প্রয়োজনীয়তা ও সুফল

শান্তি মানুষের চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা। মানুষ স্বভাবতই সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে চায়। তাই পৃথিবীর শান্তিকামী ও বিবেকবান মানুষ যুদ্ধকে সমূলে উৎপাটন করে বিশ্বজুড়ে শান্তির পতাকা উড়াতে বদ্ধপরিকর।

যেখানে শান্তি বিরাজ করে, সেখানেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ে, বিনিয়োগ সহজ হয় এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জন করা সম্ভব হয়। সামরিক খাতে বিপুল ব্যয় না করে সেই অর্থ তখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যবহার করা যায়। শান্তিতে থাকা দেশগুলোতে দ্রুত অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হয়, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে।

শান্তি হলো মানবাধিকার রক্ষার প্রথম ও প্রধান শর্ত। শান্ত পরিবেশে মানুষ তার মৌলিক অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারে। যুদ্ধ বন্ধ হলে নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের ওপর সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ হয়। ফলে মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন, মত প্রকাশ এবং নিজেদের পছন্দমতো জীবনযাত্রা পরিচালনা করার সুযোগ পায়।

শান্তি সৃজনশীলতাকে প্রসারিত করে

সংঘাতমুক্ত পরিবেশ গবেষণার দুয়ার খুলে দেয়, শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করে এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্রুত প্রসারে সহায়তা করে। যুদ্ধের পরিবর্তে, সমস্ত গবেষণা তখন মানবকল্যাণে মনোনিবেশ করতে পারে। এর ফলে চিকিৎসা, মহাকাশ বিজ্ঞান বা পরিবেশ বিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে দ্রুত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়।

বিশ্বশান্তি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। এর মাধ্যমে দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। বাণিজ্যের আদান-প্রদান সহজ হওয়ার ফলে তা বিশ্বজুড়ে স্থিতিশীলতা এনে দেয়।

শান্তি প্রতিষ্ঠার কৌশল

বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করতে হলে আন্তর্জাতিক আদালত এবং আন্তর্জাতিক আইনকে আরও কার্যকর করা অপরিহার্য, যাতে কোনো দেশ সহজে যুদ্ধ শুরু করার সাহস না পায়। এছাড়া, শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘকে আরও কঠোর হতে হবে এবং ভেটো ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব না থাকে, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি।

গণমাধ্যমকে সংঘাত উস্কে না দিয়ে বরং সংবাদের মাধ্যমে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা প্রচার করতে হবে এবং ভুল তথ্যের প্রচার রোধ করতে হবে। গণমাধ্যমগুলো সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের মানবিক দিকগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারে এবং আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের সম্ভাবনা নিয়ে আলোকপাত করতে পারে।

শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের করণীয়

বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আরও সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যুদ্ধ প্রস্তুতির পেছনে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়, তা অবশ্যই মানবতার কল্যাণে ব্যয় করা উচিত।

সামরিক পদক্ষেপের পরিবর্তে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে মধ্যস্থতা, আলোচনা এবং কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান খোঁজাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই আলোচনার টেবিলে বসা হলো সবচেয়ে বিচক্ষণ পদক্ষেপ। এজন্য জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরও শক্তিশালী করে তোলা অত্যন্ত জরুরি।

বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পারমাণবিক অস্ত্রসহ সকল বিধ্বংসী অস্ত্রের উৎপাদন অবিলম্বে বন্ধ করা জরুরি। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী অস্ত্র প্রতিযোগিতা হ্রাস করতে হবে। এই প্রতিযোগিতা শুধু ব্যয়বহুলই নয়, এটি যুদ্ধের ঝুঁকিকেও বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। তাই বিশ্বজুড়ে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা এখন আবশ্যক।

ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মধ্যে সহমর্মিতা ও অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বীজ বপন করতে হবে। এজন্য শিক্ষাব্যবস্থায় এবং পাঠ্যপুস্তকে শান্তি, সহিষ্ণুতা, মানবাধিকার এবং অহিংসার শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। শিক্ষাব্যবস্থা যেন মানবতাবাদী আদর্শ প্রচার করে, সেই লক্ষ্যেই পদক্ষেপ নিতে হবে।

উপসংহার

অতঃপর, এই বার্তাটি স্পষ্ট যে, যুদ্ধ নয়, বরং শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার এবং মানবজাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শান্তির কোনো বিকল্প নেই। শান্তি কোনো অলীক কল্পনা বা শুধুই স্বপ্ন নয়, বরং এটি মানবজাতির সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সদিচ্ছার ফল। সকল ধ্বংসাত্মক শক্তিকে পরিহার করে শান্তির পথে হাঁটাই হবে একটি প্রগতিশীল সমাজের একমাত্র পথ।

আসুন, আমরা মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ আরও বাড়িয়ে তুলি। শান্তির মঙ্গল আলোকচ্ছটা বিস্তৃত হোক পৃথিবীর চারদিকে। আজ প্রতিটি মানুষের অঙ্গীকার হোক যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।