মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার রচনা ২০, ২৫ পয়েন্ট
মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার রচনা ২০ ও ২৫ পয়েন্ট লেখা হয়েছে যারা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের যেমন – Class 10, SSC, HSC পরীক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা চেষ্টা করবে যেন কমপক্ষে ২৫টি পয়েন্ট ব্যবহার করে। আর এসএসসি ও অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা রচনাটি ২০ পয়েন্টে লিখলেই যথেষ্ট হবে।
মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনাটি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখা হয়েছে। যেন, একবার পড়লেই মুখস্থ হয়ে যায়। যাদের ২৫০, ৫০০ কিংবা ১০০০ শব্দের মধ্যে প্রয়োজন হবে, তারা এখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী অংশগুলো ব্যবহার করতে পারবে। তাহলে চলুন, এবার শুরু করা যাক।
আরো দেখুনঃ যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা ২০ পয়েন্ট HSC, SSC
মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার রচনা ২৫ পয়েন্ট
নিচে মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনাটি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখা হলঃ
ভূমিকা
বর্তমান বিশ্বে মাদকাসক্তি একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এর শিকার হয়ে নিজেদের জীবন নিঃশেষ করে দিচ্ছে। এর ফলস্বরূপ সমাজে নানা ধরনের অপরাধ প্রবণতাও বেড়ে চলেছে।
মাদকাসক্তি হলো এমন কিছু দ্রব্য ব্যবহার করা যা মানুষের স্বাভাবিক আচরণে পরিবর্তন আনে এবং ধীরে ধীরে সেই দ্রব্যের প্রতি নেশা ও তীব্র আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলে।
মূলত বিভিন্ন নেশার দ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমে নেশা করার প্রবণতাই হলো মাদকাসক্তি। ক্ষণিকের জন্য মনের কষ্ট বা যন্ত্রণা দূর করা, বেদনা থেকে মুক্তি পাওয়া এবং বাস্তব জগৎ ভুলে এক অন্য জগতে চলে যাওয়ার এই ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকেই মাদকের প্রতি এই আসক্তি জন্ম নেয়।
মাদকদ্রব্যসমূহ
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মাদকদ্রব্য মানুষকে তীব্রভাবে আসক্ত করে তোলে। এই আসক্তির আকর্ষণ এতো প্রবল যে, একবার কেউ এর কবলে পড়লে তার পক্ষে স্বাভাবিক, সহজ জীবনে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। নারকোটিক ড্রাগ হলো এক জাতীয় মাদকদ্রব্য, যার মধ্যে রয়েছে হেরোইন, ব্রাউনসুগার, এল-এস-ডি, স্ম্যাক-এর মতো বিভিন্ন নাম।
এছাড়াও, মানুষের নেশার জন্য ব্যবহৃত অন্যান্য ড্রাগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: গাঁজা, আফিম, চরস, ভাং, প্যাথেড্রিন, মরফিন, হাসিস, কোকেন এবং বিভিন্ন প্রকার ঘুমের ট্যাবলেট। বর্তমানে, ইউরোপের বাজারগুলোতে ‘বাজুকো’ নামে এক নতুন ধরনের মাদকদ্রব্যের রমরমা ব্যবসা চলছে, যা তৈরি করা হচ্ছে আকাঁড়া কোকেনের সঙ্গে তামাক মিশিয়ে।
হেরোইনের মূল উৎস হলো আফিম, যা আবার পপি উৎপাদনের মাধ্যমে পাওয়া যায়। এই আফিমের উৎপাদনে প্রধান এলাকাগুলো হলো গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল, গোল্ডেন ক্রিসেন্ট এবং গোল্ডেন ওয়েজ।
বিশ্বজুড়ে মাদক-বিরোধী আন্দোলন বনাম বাংলাদেশ
মাদকপ্রতিরোধ আন্দোলনে বিশ্বজুড়ে নেতৃত্ব দিতে যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম এগিয়ে আসে। এরপর ১৯৮৭ সালে বিশ্বের আরও ২৩টি রাষ্ট্র এই আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হয়। মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশও এখন সোচ্চার।
এরই অংশ হিসেবে, কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইরানে ৩১ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য ১৯৯০ সাল থেকে ঢাকার তেজগাঁওয়ে স্থাপিত মাদক চিকিৎসা কেন্দ্র কাজ করছে। এছাড়াও, খুলনা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে আরও তিনটি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার
উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতোই আমাদের দেশেও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে আমাদের যুবসমাজ মারাত্মকভাবে মাদকাসক্তির শিকার হচ্ছে।
বাংলাদেশে ঠিক কী পরিমাণ মাদকদ্রব্য ব্যবহৃত হয় বা কতজন লোক মাদকাসক্ত, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৭ ভাগ মানুষ মাদকদ্রব্য ব্যবহার করে।
বাংলাদেশে বৈধভাবে ৩৫০টি গাঁজার দোকান রয়েছে। এছাড়াও, দর্শনায় অবস্থিত কেরু এন্ড কোম্পানি হলো সরকার অনুমোদিত দেশের একমাত্র মদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মদ উৎপাদন ও বিক্রি করা হয়।
বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের কবলে বাংলাদেশ
মাদকদ্রব্যের উৎপাদন দ্রুত গতিতে বাড়ার কারণে এর জন্য বাজারের প্রয়োজন বেড়েছে। এই বাজারের অন্যতম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে।
স্বাধীনতার কয়েক বছর পর থেকেই বাংলাদেশে এই নেশা ব্যাপকভাবে ছড়াতে শুরু করেছিল। বর্তমানে গাঁজা, চরস, হাসিস, হেরোইন, কোকেন, হেম্প, ব্রাউনসুগার, ওপিয়াম ডেরিভেটিস-এর মতো নানা প্রকার মাদকদ্রব্যে দেশ ছেয়ে গেছে।
মাত্র এক গ্রাম হেরোইন বা ব্রাউনসুগার দু থেকে তিনবার ব্যবহার করলেই সে ব্যক্তি এই নেশা থেকে নিজেকে সহজে মুক্ত করতে পারে না। এমনকি কৌতূহলের বশবর্তী হয়েও যারা একবার এই নেশার কবলে পড়েছে, তারা যেন নরকের কারাগারে বন্দী হয়ে গেছে।
মাদকাসক্তির কারণ
মানুষের মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ। বেকারত্ব, হতাশা, অথবা বন্ধুবান্ধবের প্ররোচনায় কৌতূহল মেটাতে গিয়ে কেউ দু-একবার মাদক সেবন শুরু করে এর যাদুস্পর্শ থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারে না। এছাড়াও, কোনো মানসিক আঘাত পেলে তা সাময়িকভাবে ভুলে থাকার জন্য মানুষ মাদক সেবন করে, যা পরবর্তীকালে স্থায়ী নেশায় পরিণত হয়।
আবার, চিরন্তন নতুনত্বের নেশা, নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের দুর্নিবার আকর্ষণ এবং সাময়িক ভালোলাগার বশবর্তী হয়েও অনেকে আসক্ত হয়। দেশের বিশেষ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিজের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে না পেরে যারা হতাশায় ভোগে, তারাও আসক্তির পথে পা বাড়ায়।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ীরাও দূর থেকে কাজ করে এই আসক্ত লোকসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য যা খুবই ভয়াবহ একটি পরিস্থিতি।
মাদকের উৎসভূমি
হেরোইনের মূল উৎস হলো গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল (লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড), গোল্ডেন ক্রিসেন্ট (আফগানিস্তান, ইরান, পাকিস্তান) এবং গোল্ডেন ওয়েজ। মাদকদ্রব্যের মধ্যে আফিম হলো সবচেয়ে প্রাচীন। পপি ফুলের নির্যাস থেকে কৃষকেরা কাঁচা আফিম তৈরি করেন। এই কাঁচা আফিম থেকে তৈরি হয় মরফিন বেস, এবং এই মরফিন বেস থেকেই প্রস্তুত হয় সর্বনাশা হেরোইন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, জ্যামাইকা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, ঘানা, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা সহ বিভিন্ন দেশে মারিজুয়ানা উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে, হাশিস উৎপাদনের জন্য জ্যামাইকা, মরক্কো, জর্দান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত ও নেপাল বিশেষভাবে পরিচিত।
মাদকের নেশা দ্রুত প্রসারের কারণ
সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হতাশা ও দুঃখবোধ থেকে সাময়িক শান্তিলাভের আশা থেকেই এই মারাত্মক নেশা ক্রমে বিস্তার লাভ করছে। পাশাপাশি, এটিও সত্য যে অনেক দেশে বিপথগামী মানুষ ও বহুজাতিক সংস্থাগুলো উৎকট অর্থলালসায় রমরমা মাদক ব্যবসায়ের পথ বেছে নিয়েছে।
বিভিন্ন দেশের মাফিয়া চক্র এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এই মাদক কারবারিরা সারা বিশ্বে তাদের ব্যবসায়িক ও হীনস্বার্থ রক্ষার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই নেশা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
মাদকাসক্ত হবার প্রাথমিক লক্ষণ ও পরিণতি
মাদকাসক্ত হওয়ার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। ড্রাগে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের আচার-আচরণের মধ্যে একটি খাপছাড়া ভাব দেখা যায় এবং তাদের চেহারাও রুক্ষ হয়ে যায়। খিদে না পাওয়া এবং দ্রুত ওজন হ্রাস এই আসক্তির প্রাথমিক লক্ষণ।
মাদকাসক্ত হলে তাদের মধ্যে কিছু অভ্যাস দেখা যায়: তারা যখন তখন নিজের ঘরে ফিরে আসে, বইপত্র, খাতা-কলম ও অন্যান্য জিনিস হারিয়ে ফেলে, পায়খানা বা বাথরুমে বেশি সময় কাটায়, চোখের তারা ছোট হয়ে যায়, এমনকি তাদের মধ্যে চুরির অভ্যাসও দেখা যেতে পারে। এই সময় থেকেই অভিভাবকদের সতর্ক হওয়া উচিত।
চিকিৎসকদের মতে, এই সাময়িক ভালোলাগা থেকেই ধীরে ধীরে স্নায়ু অসাড় হয়ে যায়, কর্মক্ষমতা লোপ পায় এবং জীবন থেকে ক্রমে ক্রমে মৃত্যুর ঘণ্টাধ্বনি বেজে ওঠে।
মাদকাসক্তির প্রভাব
সারা বিশ্বজুড়ে মাদকাসক্তি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, এমনকি অনেক উন্নত দেশেও এর ব্যাপকতা জাতির জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। এই সর্বনাশা নেশার প্রসারের ফলে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
তবে এর সম্প্রসারণের প্রবণতা তরুণ সমাজের মধ্যে খুব বেশি। শিক্ষাজীবনের অনিশ্চয়তা, বেকারত্বের অভিশাপ ও দারিদ্রের গ্রাস এইসব কারণে যুবসমাজ ক্রমশ নেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
নেশাগ্রস্তদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধের অভাব দেখা দেওয়ায় তারা অন্যায় ও অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকদ্রব্যের উচ্চ দামের কারণে নেশাগ্রস্তরা অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনেও তৎপর হয়ে উঠছে। মাদকদ্রব্যের এই ব্যাপক ব্যবহার এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব সহজেই অনুমান করা যায়।
মাদকাসক্তির ক্ষতিকর দিক
মাদকদ্রব্য গ্রহণের আসক্তি সুপ্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত আছে এবং যুগে যুগে এটি সমস্যার সৃষ্টি করেছে। একসময় চীন দেশের বহু লোক আফিম খেয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল।
সাম্প্রতিককালে মাদকাসক্তির প্রভাবে বহুলোকের, বিশেষত যুবসমাজের জীবনে ধ্বংস নেমে আসছে এবং এক ভয়াবহ অবক্ষয় শুরু হয়েছে। মাদক গ্রহণের ফলে বিভিন্ন রকম দৈহিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয় এবং দেহের অক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলস্বরূপ মানসিক ভারসাম্যহীনতারও সৃষ্টি হয়।
বিভিন্ন চেতনানাশক মাদকদ্রব্য ব্যবহারের কারণে মানসিক আচ্ছন্নতা, দেহের মাংসপেশির কম্পন এবং এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। পরিণামে, মাদকাসক্তি ব্যক্তিজীবনে ব্যর্থতা এবং জাতীয় জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনে।
মাদক গ্রহণে নৈতিক অবক্ষয়
মাদকদ্রব্য গ্রহণের কারণে বহু মানুষের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের জীবনে ধ্বংস নেমে আসছে, যার ফলস্বরূপ শুরু হয়েছে এক ভয়াবহ নৈতিক অবক্ষয়। এর প্রভাবে তরুণ সমাজ অধঃপতনের নিম্নসীমায় পৌঁছে যাচ্ছে।
মাদক গ্রহণে সামাজিক কুফল
মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন ও সামাজিক জীবন—সবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মাদকাসক্তির প্রভাবে যুবক শ্রেণি চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, উচ্ছৃঙ্খলা এবং নানারূপ অত্যাচার-অনাচারের আশ্রয় নেয়।
মাদকদ্রব্য ব্যক্তিকে নেশাগ্রস্ত করে তার ব্যক্তিত্বকে নষ্ট করে দেয়, এর পাশাপাশি তার সদগুণ ও শুভ চৈতন্যকেও ধ্বংস করে দেয়। ফলে জীবনের প্রতি বেঁচে থাকার অনীহা সৃষ্টি হয় এবং আসক্ত ব্যক্তিরা যা ইচ্ছা তাই করে।
মাদক গ্রহণে দৈহিক ক্ষতি
মাদকদ্রব্য দেহের নানারকম ক্ষতি সাধন করে। এটি সেবনের ফলে মানুষ ক্রমান্বয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়। এর পাশাপাশি প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পায়।
মাদকাসক্তির কারণে যকৃত ও ফুসফুসের ক্ষতি হয় এবং মানুষ যক্ষ্মা, ক্যান্সার, জন্ডিস-এর মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়। ধীরে ধীরে কিডনি অকেজো হয়ে পড়ে এবং রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এছাড়াও, দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয় এবং হৃদরোগের সৃষ্টি হয়।
মাদক গ্রহণে মানসিক কুফল
মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে মানসিক ভারসাম্যহীনতার পাশাপাশি দেহের মাংসপেশির কম্পন সৃষ্টি হয়। এভাবে একসময় তারা মানসিকভাবে জড়তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, তাদের মধ্যে ভালো-মন্দের জ্ঞান থাকে না এবং নৈতিকতাবিরোধী কাজ করতে তাদের কোনো দ্বিধাবোধ হয় না।
মাদক গ্রহণে মেধার অপচয়
মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে ব্যক্তির মেধা বিনষ্ট হয় এবং স্মরণশক্তি কমে যায়। তাদের স্বাভাবিক জীবনে বেঁচে থাকার সামর্থ্য থাকে না এবং কোনো গুরুদায়িত্ব পালন করাও এদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
মাদক গ্রহণে অন্যান্য কুফল
মাদকদ্রব্য ব্যবহারের ফলে যুব সমাজের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। সামাজিকভাবে তারা হেয় প্রতিপন্ন হয় এবং অপমানজনক জীবনযাপন করে। মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে গাড়ি চালকরা গাড়ি চালালে নানা দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও, মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতার কারণে অবৈধ জমজমাট ব্যবসা গড়ে ওঠে।
মাদক গ্রহণে ইসলাম
ইসলাম ধর্ম নেশা জাতীয় কোনো কিছু সেবন বা গ্রহণ করাকে কখনোই সমর্থন করে না। যে ব্যক্তি নেশা করেন, সে কখনো আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করতে পারে না। এটি একটি অনেক বড় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মাদক সেবন করে আল্লাহর ইবাদত করলে সেই ইবাদত কখনোই কবুল হয় না। এই কারণে, এসব নেশা জাতীয় সেবনের ক্ষেত্রে ইসলামে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
মাদক গ্রহণে অর্থনৈতিক ক্ষতি
মাদকদ্রব্য কেনার জন্য টাকার দরকার হয়; এমনকি কোনো কোনো মাদকদ্রব্য অনেক মূল্য দিয়ে কিনতে হয়। এর ফলে বিপুল অর্থের অপচয় ঘটে।
মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও কুফল
বিজ্ঞানের অভাবিত সাফল্য মাদকদ্রব্যের ক্ষেত্রেও বিস্তৃত হয়েছে, যার ফলে এমন সব মাদকদ্রব্য তৈরি হয়েছে যা মানুষকে খুব সহজেই আকৃষ্ট করে, কিন্তু তা পরিত্যাগ করা খুবই দুরূহ। বর্তমানে মাদকদ্রব্যের মধ্যে হেরোইন শীর্ষে আছে, যার মারাত্মক ক্রিয়া আসক্ত ব্যক্তিকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেয়। হেরোইন গ্রহণের পরিণতি অত্যন্ত করুণ ও ভয়াবহ।
নেশার দ্রব্যগুলো ক্যানসার, যক্ষ্মা, আলসার, পঙ্গুত্ব সহ নানা দুরারোগ্য রোগ সৃষ্টি করে মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকে। মাদকাসক্তি এমন এক ধরনের অপরাধ, যা সহজে দূর করা সম্ভব নয়।
বর্তমানে অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানের মাদকাসক্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করছেন। এ থেকে নেশাগ্রস্তদের নৈতিক অবক্ষয়ের করুণ অবস্থাটি উপলব্ধি করা যায়।
যে বয়সে একজন সন্তান বা ছাত্রের সুকুমার বৃত্তিগুলো প্রস্ফুটিত হবার কথা, সেই বয়সে সঙ্গদোষে মাদকাসক্ত হয়ে সে এক ভয়ঙ্কর অপরাধ জগতে নির্বাসিত হয়। নেশার শিকার হয়ে সে নিজের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং নেশা তথা মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার
মাদকাসক্তির কবলে আমাদের তরুণ সমাজই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। যদি এদের রক্ষা করা না যায়, তবে তা অদূর ভবিষ্যতে জাতির জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। এর মারাত্মক ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে বিশ্বজুড়ে এই ব্যাধি প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই প্রতিরোধমূলক কাজের অংশ হিসেবে, বিশ্বের সকল দেশেই মাদকদ্রব্যের উৎপাদন, আমদানি, বিক্রয় ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে কঠোর আইন তৈরি করা হয়েছে।
তবে, কেবল মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে প্রচার চালিয়ে বা উপদেশ দিয়ে এই ভয়ংকর ব্যাধির প্রতিকার করা সম্ভব নয়। এর হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে যেমন কঠোর আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন, ঠিক তেমনি পারিবারিক ও সামাজিকভাবেও এর প্রতিকারে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
নেশামুক্ত সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য মাদকাসক্ত রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসা ও রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। প্রথম ধাপে, রোগীদের সতর্কভাবে নজরে রাখতে হবে, প্রয়োজনে তাদের বেঁধে রাখারও দরকার হতে পারে। এর কারণ হলো, নেশার দুর্নিবার আকর্ষণে তারা যেন কোনোভাবেই চিকিৎসার মাঝখান থেকে ছিটকে বেরিয়ে যেতে না পারে। নেশা ছাড়ার সময় তারা নেশার বস্তুর জন্য উন্মাদপ্রায় হয়ে ওঠে।
এই সময়ে, তাদের কষ্ট উপশমের জন্য এবং কিছুটা আরাম দিতে মরফিন ইনজেকশন ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ব্যথা কমায় ও সুখের অনুভূতি আনে। শারীরিক ক্রিয়াগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত ঔষধ প্রয়োগ।
এরপর আসে মানসিক চিকিৎসার পালা। আত্মবিশ্লেষণ ও নিজস্ব চিন্তাভাবনার জন্য রোগীদের কখনও কখনও নির্জন বাস বা একাকীত্বের প্রয়োজন হয়। এই পরিস্থিতিতে সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট বা মানসিক চিকিৎসা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। সবশেষে, চিকিৎসার এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর রোগীদের জন্য পুনর্বাসন নিশ্চিত করা আবশ্যক।
সমাজের নেতাদের কর্তব্য
মাদকদ্রব্যের প্রচার ও প্রসার রোধ করার ক্ষেত্রে সমাজের নেতারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে অত্যন্ত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেন। কোনো এলাকার নেতা বা সর্দার যদি মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন, তবে সেই এলাকায় মাদকের অবাধ ব্যবহার প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা
মাদকাসক্তি দমনের ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগকারী সংস্থা তথা সরকারের ওপরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি বর্তায়। এর কারণ হলো, দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, অপরাধ প্রবণতা দমন করা এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করাই হলো সরকারের প্রধান কর্তব্য।
তাই, মাদকাসক্তির মতো অন্যতম গুরুতর অপরাধ শক্ত হাতে দমন করার জন্য সরকারকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে এবং কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্তব্য
মাদকাসক্তি প্রতিরোধে বিশ্বের সকল দেশেরই এগিয়ে আসা উচিত। এর উৎপাদন, বিপণন ও পাচার রোধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহকে আরও সচেতন হতে হবে। আশা করা যায়, এমন সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে এই ব্যবস্থার উত্তরণ অনেকাংশে সম্ভব হবে।
এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, সকল দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে এবং একযোগে কাজ করে যেতে হবে।
উপসংহার
মাদকের ব্যবহার বর্তমানে জাতীয় সমস্যারূপেই বিবেচিত হচ্ছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য মুনাফালোভী ব্যবসায়ী, ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদ এবং দুর্নীতিবাজ প্রশাসনিক কর্মকর্তা এঁরা প্রত্যেকেই দায়ী।
এই অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে, আমাদের সবাইকে মিলে সংগঠিতভাবে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই, সবাইকে মুক্ত কণ্ঠে বলতে হবে“মাদক নয়, সুস্থ জীবন চাই, শিশুদের জন্য সুস্থ সুন্দর ভবিষ্যৎ চাই।”
মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার অনুচ্ছেদ
মাদকাসক্তি বর্তমান সমাজে এক ভয়াবহ ব্যাধির নাম, যা কেবল ব্যক্তি নয়, গোটা জাতির জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার কবলে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের তরুণ সমাজ, যারা দেশের ভবিষ্যৎ। মাদকের ব্যবহার এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি এক জাতীয় সমস্যারূপে বিবেচিত হচ্ছে।
এই ভয়াবহ অবস্থার জন্য সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ দায়ী। এদের মধ্যে রয়েছে মুনাফালোভী ব্যবসায়ী, ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদ এবং দুর্নীতিবাজ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এদের অনৈতিক কার্যকলাপ মাদকের প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছে। এই সর্বনাশা স্রোত যদি আমরা রুখতে না পারি, তবে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বজায় রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এর ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করেই বিশ্বজুড়ে তা প্রতিরোধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নেশামুক্ত সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য মাদকাসক্ত রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসা ও রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। প্রথম ধাপে, রোগীদের সতর্কভাবে নজরে রাখতে হবে, প্রয়োজনে তাদের বেঁধে রাখারও দরকার হতে পারে, যেন নেশার দুর্নিবার আকর্ষণে তারা চিকিৎসা থেকে ছিটকে বেরিয়ে যেতে না পারে। নেশা ছাড়ার সময় এরা নেশার বস্তুর জন্য উন্মাদপ্রায় হয়ে ওঠে।
এই সময়ে, তাদের শারীরিক কষ্ট উপশমের জন্য এবং কিছুটা আরাম দিতে মরফিন ইনজেকশন ব্যবহার করা যেতে পারে, এবং শারীরিক ক্রিয়াগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত ঔষধ প্রয়োগ। এরপর আসে মানসিক চিকিৎসার পালা।
আত্মবিশ্লেষণ ও নিজস্ব চিন্তাভাবনার জন্য রোগীদের কখনও কখনও নির্জন বাস প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট বা মানসিক চিকিৎসা অপরিহার্য। চিকিৎসার এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর রোগীদের জন্য পুনর্বাসন নিশ্চিত করা আবশ্যক।
শুধু মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে উপদেশ দিয়ে এই ভয়ংকর ব্যাধির প্রতিকার করা সম্ভব নয়। এর হাত থেকে রক্ষার জন্য যেমন কঠোর আইন প্রয়োজন, তেমনি পারিবারিক ও সামাজিকভাবেও এর প্রতিকার করতে হবে।
মাদকদ্রব্যের প্রচার ও প্রসার রোধের ক্ষেত্রে সমাজের নেতারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে অত্যন্ত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেন। কোনো এলাকার নেতা বা সর্দার যদি মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন, তবে সেই এলাকায় মাদকের অবাধ ব্যবহার প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি বর্তায় আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগকারী সংস্থা তথা সরকারের ওপর। দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং অপরাধ প্রবণতা দমন সরকারের প্রধান কর্তব্য। তাই, মাদকাসক্তির মতো গুরুতর অপরাধ শক্ত হাতে দমন করার জন্য সরকারকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে এবং কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
মাদকদ্রব্যের উৎপাদন, বিপণন ও পাচার রোধ করার জন্য বিশ্বের সকল দেশেরই এগিয়ে আসা উচিত। এজন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহকে আরও সচেতন হতে হবে এবং সকল দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সজাগ থেকে একযোগে কাজ করে যেতে হবে।
মাদকদ্রব্যের উৎপাদন, আমদানি, বিক্রয় ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে বিশ্বের সকল দেশে আইন তৈরি করা হলেও, এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাইকে মিলে সংগঠিতভাবে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের সম্মিলিত স্লোগান হোক “মাদক নয়, সুস্থ জীবন চাই, শিশুদের জন্য সুস্থ সুন্দর ভবিষ্যৎ চাই।”