মানব জীবনে বিজ্ঞান রচনা ২০, ২৫ পয়েন্ট
মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা ২০ ও ২৫ পয়েন্ট লেখা হয়েছে যারা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের যেমন- Class 10, SSC, HSC পরীক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা চেষ্টা করবে যেন কমপক্ষে ২৫টি পয়েন্ট ব্যবহার করে। আর এসএসসি ও অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা রচনাটি ২০ পয়েন্টে লিখলেই যথেষ্ট হবে।
অনেক শিক্ষার্থী এই রচনাটি ২০০ শব্দে খোঁজে; কিন্তু যাদের ২৫০, ৫০০ কিংবা ১০০০ শব্দের মধ্যে প্রয়োজন হবে, তারা এখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী অংশগুলো ব্যবহার করতে পারবে। তাহলে চলুন, এবার শুরু করা যাক।
মানব জীবনে বিজ্ঞান রচনা ২৫ পয়েন্ট
ভূমিকা
বিজ্ঞান আজকের বিশ্বের মানুষের কাছে বিস্ময়কর সাফল্যের দ্বার খুলে দিয়েছে। মানুষের জীবনকে সহজ থেকে আরও সহজ করে তোলার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান সবার শীর্ষে। বর্তমানের মানবজীবন সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞাননির্ভর, এবং মানুষের সমস্ত কর্মপদ্ধতি এখন বিজ্ঞান দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। মানুষ এখন বিজ্ঞানকে ভিত্তি করেই সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছে। দিন দিন বিজ্ঞান তার আবিষ্কারকে অব্যাহত রেখেছে, আর এর মাধ্যমেই মানবকল্যাণ সাধিত হচ্ছে।
বিজ্ঞানের পরিচয় ও অভিযান
‘বিজ্ঞান’ শব্দের অর্থ হলো বিশেষ জ্ঞান, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Science। মানুষের যে জ্ঞানের মাধ্যমে অভিনব আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে, তাকেই বিজ্ঞান বলা হয়।
মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানের অভিযান দুরন্ত, দুর্বার এবং বাধা-বন্ধনহীন। বিজ্ঞানের কাছে অসম্ভব, অপ্রতিরোধ্য বা অগম্য বলে কিছু নেই। বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের এই বিস্ময়কর অভিযানে মানবসমাজ আজ সত্যিই বিস্মিত ও উদ্বেলিত।
বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার
বিজ্ঞানের বিস্ময়ের আসলে কোনো শেষ নেই। আজকের এই আধুনিকতা অনাগত ভবিষ্যতে সনাতন রূপে পরিগণিত হবে। বিজ্ঞানের পদচারণা সর্বদা অজানা, অচেনা ও অনাবিষ্কৃতের দিকে। প্রতিদিন বিজ্ঞান তার আবিষ্কারের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে চলেছে।
জন এল বেয়ার্ডের টেলিভিশন, বিজ্ঞানী মর্সের টেলিগ্রাম, আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের টেলিফোন এবং রাইট ব্রাদার্সের উড়োজাহাজ আবিষ্কার একসময় গোটা পৃথিবীকে চমকে দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ের নতুন আবিষ্কারগুলো প্রমাণ করেছে যে, পূর্বের সেই আবিষ্কারগুলি ছিল কেবল চমকের প্রাথমিক যাত্রা।
বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীলতা
বিজ্ঞান আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে তার নিপুণ হাত সম্প্রসারিত করেছে। প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ আমরা বিজ্ঞানের আবিষ্কার ছাড়া কার্যত অচল হয়ে পড়ি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁতের মাজন, টুথপেস্ট, হাত ধোয়ার বেসিন বা শাওয়ার কিংবা গ্রামের টিউবওয়েল সব কিছুই ব্যবহার করতে হচ্ছে। আমাদের প্রতিটি কাজের সহায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজ্ঞান এবং আমরা এর উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি।
শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসারে বিজ্ঞান
শিক্ষা সংক্রান্ত খাতগুলোতে দেখা যায় যে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসারে বিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম। বিজ্ঞান শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসারের দিকে লক্ষ রেখে তার প্রযুক্তিগত অবদান এবং সকল কর্মের মাধ্যমে লেখাপড়াকে অনেক উন্নত করে তুলেছে।
বর্তমানে ঘরে বসেই খুব সহজে অনলাইনের মাধ্যমে লেখাপড়া করা সম্ভব হয়েছে, যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিরই অবদান। এর ফলে যারা দূরবর্তী অঞ্চলের ছাত্রছাত্রী এবং আর্থিকভাবে পিছিয়ে ছিল, সেইসব শিক্ষার্থীরাও এখন উন্নত শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে, যা কেবল বিজ্ঞানের জন্যই সম্ভব হয়েছে।
এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাস্তবিক শিক্ষা লাভ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। বিজ্ঞান বৈচিত্র্যময় পদ্ধতিতে শিক্ষার প্রসার ও মান বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষা গ্রহণের একটি অন্যতম মাধ্যম এনে দিয়েছে, যা আগে কখনো সম্ভব ছিল না। বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একসঙ্গে ব্যাপক হারে কাজ করছে, যার দ্বারা সকল শিক্ষার্থীর অনেক উন্নতি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
শিল্প ক্ষেত্রে বিজ্ঞান
বর্তমান যুগে যে দেশ শিল্পে যত বেশি উন্নত, অর্থনীতিতেও সে দেশ তত বেশি শক্তিশালী। আজকের আধুনিক সভ্যতা মূলত উন্নত শিল্পকারখানা এবং মেশিনারীর ওপর নির্ভরশীল। শিল্পোন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় এই যন্ত্রপাতিগুলো বিজ্ঞানেরই অবদান। বিজ্ঞান শিল্পায়নকে আরও দক্ষ এবং সহজ করে তুলেছে। শিল্পায়ন আমাদের বিদেশ নির্ভরশীলতা কমাতে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানে সহায়তা করছে।
যােগাযােগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান
যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের যুগান্তকারী সাফল্য মানুষের জীবনে নিয়ে এসেছে পরম শান্তি। দ্রুতগতির ট্রেন আবিষ্কারের ফলে মানুষ এখন হাজার কিলোমিটারের দূরত্বকে অনেক কাছে নিয়ে এসেছে। এছাড়াও, অত্যাধুনিক কনকর্ড বিমান এবং সমুদ্রের বিশাল জাহাজ মানুষের পথের দূরত্বকে কমিয়েছে বিস্ময়করভাবে। তবে, বিজ্ঞানের এক বিরাট সাফল্য হলো আধুনিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা।
বর্তমানে, গোটা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের খবর মিনিটের মধ্যে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে মোবাইল ফোনের বাটন চেপে এক স্থানের কোনো ছবি দ্রুত অন্য প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞান এখন কেবল মহাকাশেই ব্যস্ত নেই; বরং তা আমাদের ক্ষুদ্র গৃহকোণেও অবিরাম সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান
আধুনিক বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রেও অশেষ উন্নতি সাধন করেছে। প্রাচীনকালে ব্যবহৃত ভোঁতা লাঙলের পরিবর্তে আজ কৃষিকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নতমানের কলের লাঙল ও ট্র্যাক্টর। ফসলের উৎপাদন ও গুণগত মান বাড়ানোর জন্য এখন ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক রাসায়নিক সার। এছাড়াও, কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করতে উন্নতমানের কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে।
কৃষকরা আর প্রকৃতির দয়ার ওপর নির্ভরশীল না থেকে, এখন গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে পারছেন। গবেষণার মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে উন্নতমানের বীজ। তাছাড়া, থরথরে শীত এবং লবণাক্ততা সহ্য করার মতো ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন কৃষি উৎপাদনে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, ধান, গমসহ সকল প্রকার খাদ্যশস্যের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাশাপাশি, উন্নত জাতের মাছ, গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি উদ্ভাবনের কারণে এসবের উৎপাদনও বেড়েছে অভাবনীয় হারে। এভাবে বিজ্ঞান আজ তার উর্বরতা দিয়ে ক্ষয়িষ্ণু বসুধাকে শস্যবতী করে তুলেছে এবং ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
শিল্প উন্নতিতে বিজ্ঞান
বর্তমানে শিল্পোন্নয়নে বিজ্ঞান সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করছে। আগে যেখানে শ্রমিকেরা সবকিছু হাত দিয়ে করতেন, এখন সেখানে বিভিন্ন ধরনের রোবটিক্স এবং বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে তাদের শ্রম অনেক কমে গেছে।
নতুন নতুন প্রযুক্তির বিকাশে শিল্পক্ষেত্রে যে অগ্রগতি সৃষ্টি হচ্ছে, তা অর্থনীতির বৃদ্ধি বা নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করতে পারে। শিল্পোন্নতির জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আজ এক অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে; কারণ এগুলি মানবকল্যাণের জন্য একটি বড় মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।
প্রকৌশল ক্ষেত্রে বিজ্ঞান
সভ্যতার উন্নতি ও বিকাশে প্রকৌশল বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। প্রকৌশল বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত নানা অসম্ভবকে সম্ভব করে চলেছে। আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে নতুন নতুন দালানকোঠা, অত্যাধুনিক রাস্তা, হাইওয়ে এবং টুইন টাওয়ারের মতো বিচিত্র স্থাপনা। এই সমস্ত প্রকৌশল কাজে বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত কলাকৌশল ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবেই বিজ্ঞান মানব সভ্যতাকে নিয়ে গেছে আরও একধাপ এগিয়ে।
পরিবেশ সুরক্ষায় বিজ্ঞান
পরিবেশ হল আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের আধার। যখন এই প্রাকৃতিক সম্পদ প্রায় ধ্বংসের পথে চলে গিয়েছিল, ঠিক তখনই সেগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এর উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আগেকার দিনে যে সকল ময়লা-আবর্জনা আশেপাশে পড়ে থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতো, সেগুলোকে সরানো বা পরিবেশ সুরক্ষায় বিজ্ঞান আমাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন এনেছে।
যেমন, ময়লা বহনকারী গাড়ির ব্যবহার, যার মাধ্যমে আবর্জনাগুলোকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং সেখানে সেগুলোর প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়াকরণ বা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এছাড়াও, পরিবেশ মনিটরিং সিস্টেম এবং বিষাক্ত আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণের জন্য উন্নত প্রযুক্তি আগে ছিল না, যা শুধুমাত্র বিজ্ঞানের হাত ধরেই নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
পানি বিশুদ্ধকরণ এবং দূষণ নির্মূলে বিজ্ঞান
বিজ্ঞান মানব কল্যাণে দূষিত পানি পান করার ঝুঁকি থেকে মানুষকে মুক্ত করার এক উপায় তৈরি করেছে এবং এর মাধ্যমে পরিষ্কার পানির অভাব দূর করেছে। যেখানে একসময় মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে মারা যেত, সেখানে বিজ্ঞান পানি বিশোধন পদ্ধতি খুব সহজে বিভিন্ন ন্যানোটেকনোলজির মাধ্যমে পরিষ্কার করে দেখিয়েছে।
অন্যদিকে, শিল্প দূষণের ফলে সৃষ্ট জলাশয়ের নারী (জলজ পরিবেশ)-তে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ অপসারণের জন্য বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এর ফলে খুব সুন্দরভাবে পরিষ্কার পানি পান করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা এবং রোগের প্রতিরোধ অনেকটাই কমে এসেছে।
প্রাথমিক চিকিৎসায় বিজ্ঞান
প্রাথমিক চিকিৎসার সুবিধা প্রদান করা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অন্যতম বড় একটি অবদান। এই অবদানের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে জরুরি চিকিৎসাসেবা বা পরামর্শ পাওয়ার সুযোগ।
এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহারের ফলে মানুষ এখন তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জরুরি সেবা খুব সহজে স্মার্টফোনের মাধ্যমে পেতে পারে। এছাড়াও, বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে স্মার্টফোন ব্যবহার করে তারা জরুরি তথ্য এবং চিকিৎসার পরামর্শ সবকিছুই সহজেই লাভ করতে পারছে।
স্বাস্থ্য সেবায় বিজ্ঞান
স্বাস্থ্যসেবায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদানকে অসীম বললেও ভুল হবে না। এটি শুধু আমাদের মানব জগতেই নয়, পৃথিবীর বাইরেও কিছু অজানা বিষয় জানতে সহায়তা করেছে। আধুনিক বিশ্বে বিজ্ঞান স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে উন্নত পরিবর্তন সাধন করেছে।
তাছাড়া, টেলিমেডিসিন এবং মোবাইল হেলথ অ্যাপসগুলো মানুষকে আরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে সহযোগিতা করছে। ডিজিটাল হেলথ রেকর্ড সহ সকল প্রকার স্বাস্থ্যসেবায় বিজ্ঞান এখন নিয়োজিত।
এই বিজ্ঞানের ফলেই ডাক্তাররা অনেক রোগ নিরাময়ের সু-ব্যবস্থা করতে পারছেন। রোগীদের স্বাস্থ্যের ওপর কোনো ঝুঁকি না রেখে সবকিছু সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে এবং রোগাক্রান্ত রোগীদের রোগগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান মানুষকে এনে দিয়েছে স্বাচ্ছন্দ্য ও আরাম-আয়েশ। রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, বৈদ্যুতিক বাতি ও পাখা, টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ, বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি, বৈদ্যুতিক হিটার ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে আমাদের জীবনযাত্রা এখন অত্যন্ত সহজ ও আরামদায়ক হয়ে উঠেছে।
অফিস-আদালতে প্রতিদিন ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পিউটার, ফটোস্ট্যাট মেশিন, টেলেক্স, ফ্যাক্স-এর মতো অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। এমনিভাবে বিজ্ঞান মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কত ধরনের প্রয়োজন যে মেটাচ্ছে, তার ইয়ত্তা নেই।
খাদ্য নিরাপত্তায় বিজ্ঞান
এই বিজ্ঞানই আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে খাদ্যগুলো দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়, যার ফলে মানব সমাজে দীর্ঘদিন ধরে সেই খাদ্যগুলো গ্রহণের সুব্যবস্থা হয়েছে। বিজ্ঞান এই কৌশল আবিষ্কার করে আগের শতকগুলোর থেকে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে এবং খাদ্যের অপচয় রোধের সমাধান দিয়েছে। এটি বর্তমান বিজ্ঞানের ধারায় সম্ভব হয়েছে।
এছাড়াও, এখন স্মার্ট কৃষি পদ্ধতি চালু করা সম্ভব হয়েছে। এই পদ্ধতি কৃষকদের অনেক উন্নতি সাধন করেছে এবং প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে কৃষি ও স্মার্ট কৃষি কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আগে যেখানে সার ও পানির অভাবে অনেক কৃষিক্ষেত নষ্ট ও অপচয় হতো, সেখানে বিজ্ঞান এখন একটি উন্নত মাধ্যম চালু করে দিয়েছে। বিজ্ঞান শুধু পানি দেওয়ার ব্যবস্থাকে উন্নত করেনি, বরং সার ব্যবহারের কার্যকর পদ্ধতি গড়ে তুলেছে, যা খাদ্য উৎপাদনে সক্ষম ও সহায়ক ভূমিকা রাখে।
অবকাঠামো নির্মাণে বিজ্ঞান
যে কোনো দেশের উন্নয়নের জন্য উন্নত অবকাঠামো অত্যাবশ্যক। বিজ্ঞান আজ অতি সহজেই শক্তিশালী অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করছে। শিল্প-কারখানার জন্য দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, যোগাযোগের জন্য রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদি উন্নত কাঠামো নির্মাণে বিজ্ঞান আমাদের সাহায্য করছে। এর ফলে উন্নয়নের প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করার পথ আরও সুগম হচ্ছে।
পরিবহনের উন্নতি বিজ্ঞান
যখন বিজ্ঞান ছিল না, তখন পরিবহনের হাল অনেক খারাপ ছিল। সে সময় গরুর গাড়ি সহ বিভিন্ন ধীরগতির যানবাহনের ব্যবহার ছিল। তবে এই বিজ্ঞানের যুগে, বিজ্ঞান আমাদের উপহার দিয়েছে স্মার্ট গাড়ি এবং পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক স্মার্ট গাড়ি।
এছাড়াও, অটোমেটিক সিস্টেম সহ নেভিগেশন, জিপিএস এবং রিয়েল-টাইম যাত্রী তথ্য সিস্টেম বিজ্ঞান কার্যকর করে তুলেছে। এর ফলস্বরূপ, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি এসেছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মজবুত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে, পরিবহনের এই প্রযুক্তিগত উন্নতি মানবকল্যাণে এক অপরিহার্য অংশ।
ডাটা বিশ্লেষণে বিজ্ঞান
এমন কোনো দিক নেই, যেখানে বিজ্ঞানের অনুদানের বা পদক্ষেপের সাহায্য ছাড়া মানুষ বেঁচে আছে। নিশ্চিতভাবে সকল কাজের পেছনে বিজ্ঞানের কোনো না কোনো অবদান রয়েছেই।
ডেটা বিশ্লেষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা বিজ্ঞান প্রযুক্তির অন্যতম উপাদান। যেমন, ন্যূনতম সোশ্যাল মিডিয়া কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্মগুলো সবসময় আপডেটেড ডেটা দেওয়ার জন্য সক্ষম হয়। বিজ্ঞান স্বাস্থ্যসেবা, ডেটা বিশ্লেষণ, পরিবর্তন, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডেটা সরবরাহ করে থাকে। সেটা জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্যসেবা সকল কিছুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিজ্ঞান
অর্থনীতির ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের অবদান কম কিছু নয়। বিজ্ঞানের প্রভাবে এখন দুর্গম অঞ্চলের মানুষও বিশ্ব অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারছে এবং তাদের আয়ের সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার লক্ষণ।
এছাড়াও, অর্থনীতি খাতে বিজ্ঞান এমন অনেক অবদান রেখেছে যা আগে দেখা যায়নি। মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেম, অনলাইন ব্যাংকিং এবং অনলাইন বাণিজ্য সহজলভ্য হওয়ায় নিরাপদ অর্থ লেনদেনের পথ প্রশস্ত হয়েছে। এটি অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিতে উৎসাহ প্রদান করে। পাশাপাশি, বিজ্ঞান ক্ষুদ্র ও বড় ব্যবসাগুলোর মডেলকে নতুন জীবন দান করেছে।
খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিজ্ঞান
যে বিজ্ঞান সামুদ্রিক খাবার চাষ করতে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে সক্ষম হয়েছে এবং সফলভাবে সেগুলোকে বাস্তবায়ন করেছে, তা খাদ্য উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাবে বলে মনে হয়। এটি শুধু ফলন বৃদ্ধিই করছে না, বরং অনেক নিরাপত্তার সাথে ক্ষুধানিরাপত্তায় অবদান রাখছে।
বিজ্ঞান হাইড্রোপনিক্স এবং অ্যাকোয়াপনিক্সের মতো প্রযুক্তি উপহার দিয়েছে, যা সামান্য পানি এবং সীমিত জমি ব্যবহার করেও উচ্চ ফলন দিচ্ছে। এটি টেকসই কৃষির দিকে একটি বড় ধাপ।
বিজ্ঞান বিশ্বের খাদ্য সংকট মোকাবেলা এবং মানবকল্যাণে প্রযুক্তিগত সমর্থনের মাধ্যমে আরও বেশি প্রমাণিত হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সকল ক্ষেত্রে উন্নতির কারণে অনেক এগিয়ে গিয়েছে, যে উন্নতি কৃষির ধাপ এবং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সুবিধা দিচ্ছে।
বিজ্ঞানের ক্ষতিকর দিক
বিজ্ঞান একদিকে যেমন মানবজাতির অশেষ কল্যাণ সাধন করে চলেছে, অন্যদিকে তেমনি তা নিয়ে এসেছে বিভীষিকাও। যন্ত্রপাতির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণে মানুষের জীবনে এসেছে যন্ত্রনির্ভরতা ও কর্মবিমুখতা। এর ফলস্বরূপ, অনেক ক্ষেত্রেই বেকার সমস্যা আরও বেড়ে চলেছে।
ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনের মতো আধুনিক প্রযুক্তির হাত ধরে অনেকক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ ঘটছে বিজাতীয় অপসংস্কৃতির। এতে করে যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে। রাসায়নিক ও পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার আজ মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের মুখােমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে।
মিসাইল, বোমারু বিমান, ট্যাংক, সাবমেরিন ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে মানবজীবনে বিজ্ঞান অভিশাপে পরিণত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার বোমা বর্ষণের পর জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরের ধ্বংসযজ্ঞ তারই বাস্তব প্রমাণ।
বিজ্ঞানের ধ্বংসাত্মক ক্রিয়া
বর্তমান শতাব্দীতে সংঘটিত দুটি মহাযুদ্ধে বিজ্ঞানের শক্তির ভয়াবহ ধ্বংসলীলা মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। কামান, বন্দুক, অ্যাটম বোমা, হাইড্রোজেন বোমা, পরমাণু বোমা, ডিনামাইট, বোমারু বিমান, ট্যাঙ্ক, সাবমেরিন ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞান আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে শক্তিধর দেশগুলো জীবাণু-ভিত্তিক আণবিক অস্ত্র তৈরি করছে এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এসব অস্ত্র অবশ্যই ব্যবহৃত হবে, আর তাতে পৃথিবীর ধ্বংস তখন অনিবার্য হয়ে উঠবে। এছাড়া, গ্রিনহাউজ এফেক্টের কারণে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর নষ্ট হচ্ছে, যার ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে।
এর ফলে মানুষের শরীরে নানা ধরনের জটিল রোগ দেখা দিচ্ছে। বাস, ট্রাক সহ অন্যান্য যানবাহনের কালো ধোঁয়া পরিবেশকে বিপর্যস্ত করছে। বিভিন্ন কল-কারখানার বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনের কোনো সুব্যবস্থা না থাকায় তা সরাসরি নদীনালা ও সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে। এমনকি জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশকও পানিতে মিশে জলকে দূষিত করছে। ফলস্বরূপ, মানুষের জীবনযাপন ক্রমেই বিপদজনক হয়ে পড়ছে।
বিজ্ঞানের অভিশাপ
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিজ্ঞান কখনো কখনো মানুষের জন্য অভিশাপ বয়ে আনে। যন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হতে গিয়ে মানুষ ক্রমশই কর্মবিমুখ হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হলো, বিজ্ঞানকে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে সভ্যতার ধ্বংস ও যুদ্ধ-বিগ্রহের হাতিয়ার হিসেবে।
তৈরি হচ্ছে পৃথিবীকে ধ্বংস করার মতো মারাত্মক অ্যাটম বোমা, হাইড্রোজেন বোমা, জঙ্গী বিমান ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক মারণাস্ত্র। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির ধ্বংসলীলা আধুনিক বিজ্ঞানেরই এক ভয়াবহ অভিশাপ। তবে বিজ্ঞানের এই অকল্যাণকর দিকটি মূলত মানুষের অজ্ঞানতা ও দাম্ভিকতার ফলাফল মাত্র।
উপসংহার
বর্তমান সভ্যতার মূলে রয়েছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান আমাদের জীবনে এনেছে সুখ-সমৃদ্ধি এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে করেছে গতিময়। মানবজাতি বর্তমানে প্রতিটি মুহূর্তে এবং প্রতি পদক্ষেপে বিজ্ঞানের কাছে দায়বদ্ধ। যদি বিজ্ঞানের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, তবে অদূর ভবিষ্যতে মানব সভ্যতা সমৃদ্ধি ও উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করবে।
আরো দেখুনঃ আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা
মানব জীবনে বিজ্ঞান অনুচ্ছেদ
বিজ্ঞান মানব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানব সভ্যতার শুরু থেকে আজকের আধুনিক বিশ্ব পর্যন্ত প্রতিটি অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি বিজ্ঞান। বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে শুধু সহজ করে তোলেনি, বরং দিয়েছে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন সম্ভাবনা এবং পৃথিবীকে জানার ভিন্ন উপায়।
বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় অবদান হলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে সহজ ও আরামদায়ক করে তোলা। বিদ্যুৎ আবিষ্কার আমাদের জীবনে বিপ্লব এনে দিয়েছে। ঘরে আলো জ্বালানো থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানা চালানো সবই সম্ভব বিদ্যুতের কারণে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে অগ্রগতি মানব জীবনে বিশেষ অবদান রেখেছে। অতীতে প্লেগ, গুটি বসন্ত বা কলেরা এসব রোগে হাজার হাজার মানুষ মারা যেত। কিন্তু আজ টিকা, অ্যান্টিবায়োটিক, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও গবেষণার মাধ্যমে এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অপারেশন থিয়েটার, এক্স-রে, এমআরআই, আলট্রাসনোগ্রাফি সবই বিজ্ঞানের উপহার।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞানের অবদানও অসীম। টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এসবের মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কথা বলা এখন কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির ফলে জ্ঞান অর্জন সহজ হয়েছে, মানুষ আরও সচেতন হয়েছে এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় এসেছে ডিজিটালের ছোঁয়া।
পরিবহন ব্যবস্থাতেও বিজ্ঞান এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। গাড়ি, ট্রেন, জাহাজ, বিমান এসবের মাধ্যমে মানুষ খুব অল্প সময়ে দূর দূরান্তে যাতায়াত করতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সবকিছুই উন্নত হয়েছে বিজ্ঞানের হাত ধরে।
কৃষি ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম। উচ্চফলনশীল বীজ, সার, সেচ ব্যবস্থা, কৃষিযন্ত্র, কীটনাশক এসবের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি এখন শুধু পরিশ্রমের কাজ নয়, এটি এক প্রকার উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্র।
সবকিছু বিবেচনা করলে বলা যায় মানব জীবনে বিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম, অমূল্য এবং চিরস্থায়ী। বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে নিরাপদ, উন্নত ও আধুনিক করেছে। তাই বিজ্ঞানচর্চা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও বিজ্ঞানের প্রয়োগই পারে ভবিষ্যতের উন্নত ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে।