পাখির জগৎ রচনা ৪র্থ শ্রেণি – সবথেকে সহজ ভাষায়

বাংলাদেশের প্রকৃতি তার সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের জন্য সুপরিচিত, আর সেই জীববৈচিত্র্যের অন্যতম আকর্ষণ হলো বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। নদী, বন, পাহাড়, জলাভূমি ও গ্রামীণ পরিবেশ মিলিয়ে এ দেশে পাখিদের জন্য তৈরি হয়েছে আদর্শ বাসস্থান। বাংলা সাহিত্যে পাখির উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জীবনানন্দ দাশসহ অনেক কবি পাখির সুর ও সৌন্দর্যকে তাদের রচনায় অনন্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

প্রিয় চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, আজ আমরা শিখবো একটি মনোমুগ্ধকর রচনা বাংলাদেশের পাখি সম্পর্কে। আমাদের দেশে নানা রঙের এবং নানা স্বভাবের অসংখ্য পাখি দেখতে পাওয়া যায়। তারা আকাশে ডানা মেলে উড়ে, মিষ্টি সুরে ডাকতে ডাকতে চারপাশকে আনন্দময় করে তোলে। চলুন, এখন আমরা রচনাটি সুন্দরভাবে লেখা শুরু করি যা ৪র্থ শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী হবে। 

আরও পড়ুনঃ সুন্দরবন রচনা চতুর্থ শ্রেণি

পাখির জগৎ রচনা ৪র্থ শ্রেণি

পাখির জগৎ সম্পর্কে অনেক রচনাই আপনারা পাবেন। তবে ছোট শিক্ষার্থীরা সহজে পড়তে পারে এমন সব জায়গায় পাবেন না। আমরা বেশ ছোট এবং সহজ ভাষায় তিনটি রচনা উপস্থাপন করতে যাচ্ছি একই বিষয়ের উপর। আশা করি ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এগুলো কম সময়ের মধ্যে এবং দ্রুত বুঝে পড়ে মুখস্ত করতে সক্ষম হবে।  

রচনা – ১ 

ভূমিকা

পাখির দেশ বাংলাদেশ। গাছে গাছে, ঝোপ ঝাড়ে, নদী তীরে তাদের বিচরণ। কখনো কখনো তারা দলবেঁধে আকাশে উড়ে বেড়ায়। কখনো পাতার ফাঁকে চুপ করে বসে থাকে। মাঝে মাঝে খাবারের খোঁজে পোকামাকড়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

প্রকারভেদ 

বাংলাদেশে আছে চৌষট্টি প্রজাতির ছয়শো পাখি। এর মাঝে খাবারের খোঁজে পোকা মাকড়ের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে স্থানীয় প্রজাতি চারশো এবং অতিথি পাখির প্রজাতির সংখ্যা দুইশ। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার পাখির বর্ণনা দেয়া হলঃ

দোয়েল

দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি। এদের পালকগুলো সাদা-কালো। ‘লেজটা ঊর্ধ্বমুখী। লোকালয় আর অগভীর জঙ্গলে একা একা ঘুরে বেড়ায়। বসে থাকে গাছের উঁচু ডালে আর মাঝে মাঝে মধুর সুরে গানের তালে তালে লেজ নাচায়।

চড়ুই 

চড়ুই ছয় ইঞ্চি লম্বা হয়। মাথা ছাই রঙের, পিঠে বাদামি পালক। তার উপরে কালো ছোট দাগ, এই পাখি কৃষকের বন্ধু। কাটি- স্নতঙ্গ পতা এদের প্রধান খাদ্য।

টুনটুনি

টুনটুনি পাখির পালকের রং জলপাই সবুজ। মাথায় লাল আভা। লম্বা ঠোঁটের রং কালচে খয়েরি। রঙ হলুদাভ। এরা ফসলের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশ সুন্দর করে। ফুলের মধুই টুনটুনির সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য।

বুলবুলি

বুলবুলির মাথা ও গলা কালোঝুঁটি, এর তলপেট সাজা। ঠোঁট ও পা কালো বর্ণের, খুব দ্রুত উড়তে পারে। বাংলাদেশে আরো অনেক পাখি আছে। এই পানি গুলো হলো বাঁশপাতি, টিয়া, বাবুই/শ্যামা, ধনেশ, পানডুবি, গাঙচিল, সোনালি, বেনে, ফিতে ইত্যাদি।  

উপসংহার 

পাখিরা খুবই উপকার। অধিকাংশ পাখি পোকামাকড় ও কীট-পতঙ্গ মেরে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিছু কিছু পানি মৃত পশুর বর্জ্য থেকে পরিবেশ দূষণ থেকে আমাদের বাঁচায়। তাই পাখিরা মানুষের বন্ধু।

রচনা – ২ 

ভূমিকা 

বাংলাদেশ প্রকৃতিপ্রেমীদের দেশ, আর সেই প্রকৃতির অন্যতম রত্ন হলো পাখি। গ্রামের মাঠে, বনের ধারে, নদীর তীরে কিংবা শহরের আশপাশেও নানা রঙের পাখি উড়ে বেড়ায়। কখনো সুমিষ্ট সুরে ডাক দেয়, কখনো চুপচাপ গাছের ডালে বসে প্রকৃতিকে আরো মনোরম করে তোলে। তাই পাখি বাংলাদেশের পরিবেশ ও সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ।

বাংলাদেশের পাখির ধরন

এই দেশে প্রায় ছয় শতাধিক প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এর মধ্যে প্রায় চারশো দেশীয় পাখি ও প্রায় দুইশো অতিথি পাখি শীতকালে আসে। এরা জলাভূমি, বন, পাহাড় ও গ্রামীণ এলাকায় বিচরণ করে আমাদের পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষা করে।

দোয়েল

দোয়েল বাংলাদেশের জাতীয় পাখি হিসেবে পরিচিত। এদের পালক সাদা–কালো এবং লেজ সবসময় দুলতে থাকে। এরা সাধারণত নিরিবিলি স্থানে থাকে এবং মধুর সুরে ডাক দেয়। মানুষের বসতভিটা ও ঝোপঝাড়ের আশেপাশে সহজেই এদের দেখা যায়।

ঘুঘু

ঘুঘু মাঝারি আকারের শান্ত স্বভাবের পাখি। গায়ের রং বাদামি এবং গলায় কালো দাগ থাকে। এরা ধানখেত, মাঠ এবং খোলা জায়গায় খাবার খুঁজে বেড়ায়। ঘুঘুর ডাক নরম এবং ছন্দময়।

বাবুই

বাবুই তার দৃষ্টিনন্দন বাসার জন্য বিখ্যাত। খড়, ঘাস ও পাতার ডগা দিয়ে ঝুলন্ত বাসা বানাতে এদের জুড়ি নেই। এরা খুবই কর্মঠ এবং দলবদ্ধভাবে বাসা তৈরি করতে পছন্দ করে।

উপসংহার 

পাখি পরিবেশের বন্ধু। তারা পোকামাকড় খেয়ে ফসল রক্ষা করে, বর্জ্য সরিয়ে পরিবেশ পরিষ্কার রাখে এবং প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই পাখি রক্ষার মাধ্যমে আমরা প্রকৃতিকে রক্ষা করতে পারি।

রচনা – ৩

ভূমিকা

বাংলাদেশের আকাশে, বনে আর গ্রামাঞ্চলে পাখিদের বিচরণ প্রকৃতির সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। রঙিন পালকের ঝলক, সুমধুর ডাক আর মৃদু উড়াউড়ি আমাদের মনকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে। পাখি শুধু প্রকৃতিকে সুন্দরই করে না, পরিবেশকেও উপকার করে।

দেশীয় ও অতিথি পাখি

বাংলাদেশে প্রায় ৭০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে দেশীয় ৪০০ এবং শীতের সময় দূরদেশ থেকে আসা প্রায় ২০০ প্রজাতির অতিথি পাখি। হাওর, নদী, ধানক্ষেত ও বন এসব পাখির প্রধান আবাস।

কোকিল

কোকিল তার মধুর কুহুতান দিয়ে বসন্তকে ঘোষণা করে। এদের শরীর কালো রঙের ও চোখ লালচে। বিশেষ করে গাছের ডালে বসে এরা সকালবেলা গান গেয়ে পরিবেশকে সুরভিত করে।

মাছরাঙা

মাছরাঙার রং নীল ও বাদামি মিশ্রিত। নদীর ধারে বসে মাছ ধরার দৃশ্য খুবই আকর্ষণীয়। দ্রুত গতিতে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছ তুলে আনার কৌশল এদের বিশেষতা।

গাঙচিল

গাঙচিল সাধারণত নদী ও সমুদ্রের কাছে থাকে। এদের গা সাদা এবং ডানার ডগা কালচে। আকাশে গাঙচিলের দলে দলে ওড়া দেখলে মন ভরে যায়। এরা ছোট মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে।

উপসংহার

পাখি ছাড়া প্রকৃতি অসম্পূর্ণ। পাখি পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখে, কৃষকদের সহায়তা করে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে। তাই আমাদের উচিত পাখিদের বাসস্থান ধ্বংস না করে তাদের নিরাপদে বাঁচতে সহায়তা করা।

class 4 birds' world essay

এখানে আমরা ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল ভাষায় পাখির জগৎ বিষয়ক তিনটি রচনা সাজিয়ে উপস্থাপন করেছি। ছোট শিক্ষার্থীরা যেকোনো একটি রচনা পড়েই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে। যদিও রচনাগুলো ৪র্থ শ্রেণির জন্যই লেখা হয়েছে, তবুও এর ভাষা ও ব্যাখ্যা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রাথমিকের অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও সহজে বুঝে নিতে পারে এবং একইভাবে শিখে লিখতে সক্ষম হয়।

পরিশেষে

এই লেখাটিতে ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ‘পাখির জগৎ’ রচনাটি অত্যন্ত সহজ ও বোধগম্য ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে মিল রেখে রচনাটি সাজানো হয়েছে, যাতে ৪র্থ শ্রেণির ছোট শিক্ষার্থীরা দ্রুত বুঝতে পারে এবং সহজেই মনে রাখতে পারে। কমলমতি বাচ্চাদের জন্য কোনো কঠিন শব্দ ব্যবহার না করে খুবই সরল বাক্য দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আশা করা যায়, এই সহজ ও সুন্দর ভাষায় সাজানো ‘পাখির জগৎ’ রচনাটি ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় উপকার করবে এবং তারা আনন্দের সাথে রচনাটি শিখতে পারবে।