অধ্যবসায় রচনা ২০, ২৫ ও ৩০ পয়েন্ট দেখুন
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আশা করি সবাই ভালো আছো! আজকের এই পোস্টে তোমাদের জন্য অধ্যবসায় রচনাটি শেয়ার করতে চলেছি। ছাত্রছাত্রী হিসেবে তোমাদের জীবনে অধ্যবসায় একটি বহুল আলোচিত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কারণ, অধ্যবসায় এমন একটি মহৎ গুণ যা শুধুমাত্র পড়াশোনায় নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার মূল চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে। তুলনামূলকভাবে কম মেধাবী ছাত্রও যদি নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে, তবে সেও জীবনে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়।
এই কারণে, পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি নিজেদের জীবন গঠনের ক্ষেত্রেও অধ্যবসায় রচনাটি মনোযোগ দিয়ে পড়া ও এর মর্মার্থ বোঝা তোমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
আরো দেখুনঃ বিদায় হজ রচনা ৫ম শ্রেণি
অধ্যবসায় রচনা ২০২৬
নিচে অধ্যবসায় রচনাটি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখা হলঃ
ভূমিকা
মানুষের জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য যে গুণটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তা হলো অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া কোনো কাজই স্থায়ীভাবে সফলতা লাভ করতে পারে না।
অনেকেই হয়তো মনে করেন যে, কেবল প্রতিভা বা মেধা থাকলেই মানুষ জীবনে বড় কিছু অর্জন করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি, অনেক সময় মেধাবী মানুষও ব্যর্থ হতে পারে, আবার তুলনামূলকভাবে অল্প মেধার মানুষও ধারাবাহিক পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের জোরে সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌঁছাতে পারে।
অধ্যবসায়ের সংজ্ঞা ও প্রকৃত অর্থ
অধ্যবসায় শব্দটি এসেছে ‘অধ্যবস’ ধাতু থেকে, যার মূল অর্থ হলো ধৈর্য ধরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে যাওয়া। কোনো একটি কাজের ফল যদি সঙ্গে সঙ্গে না-ও পাওয়া যায়, তবুও তাতে হতাশ না হয়ে একটানা চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াকেই অধ্যবসায় বলে। সহজ কথায়, অধ্যবসায় হলো একটি স্থির সংকল্প নিয়ে নিজের লক্ষ্যের দিকে অটলভাবে এগিয়ে চলা। কারণ, জীবনের পথে নানা বাধা-বিপত্তি আসাটা খুবই স্বাভাবিক।
অধ্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য
অবিরাম সাধনা, ক্রমাগত প্রচেষ্টা এবং সুদৃঢ় প্রত্যয়ের মিলিত নামই হলো অধ্যবসায়। অন্যভাবে বলা যায়, সাফল্য অর্জনের জন্য যে ধারাবাহিক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়, সেটিই হলো অধ্যবসায়। এটি মানব চরিত্রের একটি অত্যন্ত মূল্যবান এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
জীবনে আসা সবরকম বাধা-বিপত্তিকে জয় করার চেষ্টাই হলো অধ্যবসায়। আলস্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে, দৃঢ় বিশ্বাস রেখে একটানা চেষ্টা করে যাওয়াই হলো অধ্যবসায়। অধ্যবসায় আমাদের জীবনকে আশাবাদী করে তোলে এবং জীবনকে অর্থবহ করে তোলে।
প্রবাদ আছে, “একবার না পারিলে দেখ শতবার” এই কথাটির মধ্যেই অধ্যবসায়ের আসল বৈশিষ্ট্য নিহিত রয়েছে।
অধ্যবসায়ের গুরুত্ব
আমাদের জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সত্যিই অপরিসীম। জীবনের অসংখ্য কাজে সফল হতে হলে অধ্যবসায় আবশ্যিক। কারণ, জীবনে কোনো কিছুই সহজে পাওয়া যায় না। আমাদের আকাঙ্ক্ষা এবং সামর্থ্যের মধ্যে প্রায়শই সঙ্গতি থাকে না। বরং, জীবন বিকাশের পথে বহু প্রতিবন্ধকতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দ্বিধা, সংকোচ, লোকলজ্জা, অক্ষমতা, অলসতা এই সবকিছুই সাফল্যের পথে বড় বাধা। এছাড়াও রয়েছে বাইরের চাপ এবং ভেতরের অনীহা। অথচ, জীবনকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে কাজে লেগে থাকতে হবে এবং কর্মের মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করতে হবে। তবেই জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে।
অধ্যবসায় এই সমস্ত বাধা-বিঘ্ন দূর করে দেয়। এটি সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করার প্রেরণা যোগায়। অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই মানুষ শক্তির সন্ধান পায়, সাফল্যের পথ দেখতে পায় এবং নিজেকে আরও যোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব
ছাত্রজীবন হলো মানুষ গড়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়েই আমাদের যে অভ্যাসগুলো তৈরি হয়, তা সারাজীবন আমাদের প্রভাবিত করে। ছাত্রজীবনে যদি অধ্যবসায়ের অভ্যাস গড়ে তোলা যায়, তবে ভবিষ্যতে যেকোনো ক্ষেত্রেই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
কেবল পরীক্ষার কয়েকদিন আগে বই হাতে নিলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না। বরং, একজন ছাত্রকে প্রকৃত সাফল্যের পথে যেতে হলে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে, কঠিন বিষয়গুলো বারবার অনুশীলন করতে হবে এবং একবার ব্যর্থ হলেও সাহস না হারিয়ে পুনরায় চেষ্টা করতে হবে।
ব্যক্তি জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব
অধ্যবসায় শুধু ছাত্রজীবনের জন্যই নয়, এটি পুরো জীবনের জন্যই অপরিহার্য একটি গুণ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই অধ্যবসায়ই আমাদের সফলতার পথ তৈরি করে দেয়। কর্মজীবনে কেউ প্রথম দিনেই বড় পদে পৌঁছাতে পারে না; তাকে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে ধাপে ধাপে উপরে উঠতে হয়।
ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। একদিনে কোনো ব্যবসা বড় হয়ে ওঠে না, বরং দীর্ঘ সময় ধরে ধৈর্য, সঠিক পরিকল্পনা এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই তা সফল হয়। এমনকি, পরিবারের মধ্যে সুখ-শান্তি বজায় রাখতেও ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের ভূমিকা অপরিসীম।
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সত্যিই অপরিসীম। কোনো একটি জাতিকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সেই জাতির প্রতিটি নাগরিককে অধ্যবসায়ী হতে হবে। জাতির স্বার্থে যদি সবাই একনিষ্ঠভাবে এবং সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করে, তবেই সেই জাতি বিশ্বে একটি মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবে।
ইতিহাসে দেখা যায়, বিশ্বের জ্ঞানী, মনীষী, আবিষ্কারক, ধর্মপ্রবর্তক, রাষ্ট্রনায়ক, কবি-সাহিত্যিক, সমাজ-সংস্কারক এঁরা সকলেই অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছেন।
কর্মজীবনে অধ্যবসায়
মানুষের মেধা ও যোগ্যতা কখনোই এক মাপের হয় না। তবে একটা কথা ঠিক যে, একনিষ্ঠ চেষ্টার মাধ্যমে সবার পক্ষেই কর্মজীবনে উন্নতি করা সম্ভব।
আসলে, কঠোর পরিশ্রম ও সাধনা ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা আসে না। অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই মেধারও উন্নতি হতে পারে। আবার অন্যদিকে দেখা যায়, অনেক সময় প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও কেবল ধৈর্য বা অধ্যবসায়ের অভাবে অনেকেই ব্যর্থ হয়ে যান।
অধ্যবসায়ের সফল দৃষ্টান্ত
জীবন-সংগ্রামে সফলতার মূলমন্ত্র যে অধ্যবসায়, তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হলেন স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস। তিনি ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ডের সাথে ছয়বার যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন, তবুও তিনি নিজের প্রতিজ্ঞা থেকে সরে আসেননি।
পরপর ছয়বার পরাজিত হয়ে যখন তিনি একটি গুহার ভেতরে চিন্তায় মগ্ন ছিলেন, তখন তিনি দেখলেন একটি মাকড়সা ছয়বার ব্যর্থ হওয়ার পরেও সপ্তম বারে সফলভাবে জাল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এই দৃশ্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সপ্তমবারের যুদ্ধে ইংল্যান্ডের রাজাকে পরাজিত করে নিজের দেশ উদ্ধার করতে সক্ষম হন। তাঁর এই বিশাল সাফল্যের মূলে ছিল অধ্যবসায়।
অধ্যবসায় ও প্রতিভা
অনেকের ধারণা, অসাধারণ প্রতিভা ছাড়া কোনো কঠিন কাজে সফল হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কেবল প্রতিভার দ্বারা কোনো কাজে সাফল্য অর্জন করা যায় না; এর জন্য প্রয়োজন নিরলস পরিশ্রম ও অধ্যবসায়।
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত বিজ্ঞানী নিউটন বলেছেন, “আমার আবিষ্কারের কারণ প্রতিভা নয়, বহু বছরের চিন্তাশীলতা ও পরিশ্রমের ফলেই দুরুহ তত্ত্বগুলোর রহস্য আমি ধরতে পেরেছি।” অর্থাৎ, সাফল্যের জন্য প্রতিভার চেয়েও নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষার পদ্ধতি ও অধ্যবসায়
অধ্যবসায় বাড়ানোর জন্য কার্যকর শিক্ষার পদ্ধতি গ্রহণ করা খুবই জরুরি। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীকে তার শেখার প্রক্রিয়ায় আরও সচেতন ও লক্ষ্যমুখী করে তোলে। এর ফলে তার প্রেরণা (মোটিভেশন) এবং শেখার ক্ষমতা (সংগ্রহণ ক্ষমতা) আরও বেড়ে যায়।
অধ্যবসায় বাড়াতে যে বিষয়গুলো সহায়ক আত্ম-নির্ধারিত লক্ষ্য তৈরি করা, সময়মতো সেই লক্ষ্যগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করা এবং সক্রিয় শিক্ষা কৌশল ব্যবহার করা।
মানব সভ্যতায় অধ্যবসায়
একসময় আমাদের পূর্বপুরুষদের বর্বর ও অসভ্য বলা হতো। এটি আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা এখন আধুনিক সভ্যতার যুগের বাসিন্দা। সেই অসভ্য ও বর্বর জাতি থেকে আজকের এই সভ্য পর্যায়ে আসতে আমাদের অনেক যুগ লেগে গেছে।
এই দীর্ঘ সময় ধরে মানুষ কিন্তু বসে ছিল না। তারা নিরন্তর চেষ্টা করেছে এই পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য। তাদের এই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, মানবজাতি নিজেদেরকে এক স্বর্ণযুগ উপহার দিতে পেরেছে।
স্বাস্থ্য ও অধ্যবসায়
ভালো স্বাস্থ্য হলো সফলতা ও অধ্যবসায়ের মূল ভিত্তি। একজন সুস্থ ব্যক্তি মানসিক ও শারীরিকভাবে অনেক বেশি সক্রিয় থাকেন। এটি তাঁকে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে এবং অধ্যবসায়ী থাকতে সাহায্য করে। সুস্থ শরীর এবং মন অধ্যবসায়ের সমস্ত গুণাবলীকে বাড়িয়ে তোলে, যা ব্যক্তির লক্ষ্য অর্জনের জন্য অপরিহার্য।
সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যায় কিছু অভ্যাসের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা এবং মানসিক চাপ কমানোর কৌশল অবলম্বন করা। সুস্বাস্থ্যের কারণে একজন ব্যক্তি মানসিকভাবে আরও প্রখর এবং শারীরিকভাবে আরও সক্ষম হয়ে ওঠেন, যা তাঁকে অধ্যবসায়ের পথে আরও দৃঢ় ও অবিচলিত করে তোলে।
সৃজনশীলতা ও অধ্যবসায়
অধ্যবসায় সৃজনশীল চিন্তাভাবনা এবং নতুন ধারণা খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। নতুন নতুন আইডিয়া ও সমাধানের খোঁজে অধ্যবসায় একজন ব্যক্তিকে প্রচলিত ধারণা ও পদ্ধতির বাইরে ভাবতে উৎসাহ দেয়। এটি ব্যক্তিকে বারবার চেষ্টা চালিয়ে যেতে এবং ব্যর্থতা সত্ত্বেও উন্নতির জন্য নতুন পথ খুঁজতে সাহায্য করে।
সৃজনশীলতা ও অধ্যবসায়ের এই সমন্বয় উদ্ভাবনী ধারণাকে আরও প্রসারিত করে, যা শিল্প, বিজ্ঞান এবং ব্যবসার জগতে নতুন উদ্ভাবন ও অগ্রগতি নিয়ে আসে। অধ্যবসায় কেবল ব্যক্তির সৃজনশীল ক্ষমতা বিকাশে সহায়কই নয়, বরং এটি সমগ্র সমাজের উন্নতি ও প্রগতির পথ প্রশস্ত করে।
ব্যর্থতা ও অধ্যবসায়ের সম্পর্ক
“ব্যর্থতা হলো সাফল্যের সোপান” এই প্রবাদ বাক্যটির একটি গভীর অর্থ রয়েছে। কারণ, কোনো কাজের শুরুতেই সাফল্য আসে না। একবার, দুবার বা বহুবার চেষ্টা করেও আমাদের ব্যর্থ হতে হয়। কিন্তু সেই ব্যর্থতাকে ভয় না পেয়ে পুনরায় চেষ্টা করার যে মানসিকতা, সেটাই হলো প্রকৃত অধ্যবসায়।
ইতিহাসে এমন অনেক মহামানব আছেন, যাঁরা একাধিকবার ব্যর্থ হয়েও হাল ছাড়েননি। যেমন, থমাস এডিসন বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার করতে গিয়ে এক হাজারের বেশিবার পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। অবশেষে, তাঁর এই অধ্যবসায়ই তাঁকে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিল।
অধ্যবসায়ের সুফল
অধ্যবসায় মানুষের জীবনে অনেক সুফল নিয়ে আসে। প্রথমত, এটি মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। একবার কোনো কাজে সফল হলে, মানুষ ভবিষ্যতে আরও বেশি সাহসী হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, অধ্যবসায় আমাদের ধৈর্য এবং সহনশীলতা শেখায়। এর ফলে মানুষ সহজে হতাশ হয় না এবং কষ্টকে সহ্য করতে শেখে।
তৃতীয়ত, অধ্যবসায়ের কারণে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের সম্ভাবনা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। যেমন একজন অধ্যবসায়ী ছাত্র পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারে, একজন অধ্যবসায়ী ব্যবসায়ী সফল উদ্যোক্তা হতে পারে, আর একজন অধ্যবসায়ী খেলোয়াড় বিশ্বজয় করতে পারে।
সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে অধ্যবসায়
অধ্যবসায় শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনেই নয়, এটি সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যে সমাজে অধ্যবসায়ী মানুষে পরিপূর্ণ, সেই সমাজ কখনোই পিছিয়ে থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষকরা যদি ধৈর্য ধরে ছাত্রদের শিক্ষাদান করেন, তবে একটি শিক্ষিত প্রজন্ম তৈরি হয়, যা সমাজের উন্নতি সাধন করে।
ঠিক একইভাবে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও অধ্যবসায়ী নেতাদের প্রয়োজন। তাঁরা কোনো সিদ্ধান্ত তাড়াহুড়ো করে নেন না, বরং ধৈর্য ধরে সমস্যার সমাধান করেন এবং জাতিকে উন্নতির পথে নিয়ে যান। একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গড়তে তার নাগরিকদের অধ্যবসায়ী হওয়া অপরিহার্য।
ধর্মীয় শিক্ষায় অধ্যবসায়
ধর্মীয় শিক্ষাতেও অধ্যবসায়কে একটি মহৎ গুণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে ধৈর্য ও নিয়মিত চেষ্টা করার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ধৈর্যশীল ব্যক্তিদের জন্য আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহ রয়েছে।
হিন্দুধর্মেও কর্মকেই সর্বশ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে, যা মূলত অধ্যবসায়ের কথাই মনে করিয়ে দেয়। বৌদ্ধধর্মে বলা হয়েছে, বারবার চেষ্টা করার মাধ্যমেই নির্বাণ লাভ করা যায়। খ্রিস্টধর্মেও অধ্যবসায়কে পরম গুণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সব ধর্মই একবাক্যে স্বীকার করেছে যে, অধ্যবসায় হলো মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়।
বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের ভূমিকা:
পৃথিবীর প্রতিটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পেছনে অধ্যবসায়ের উজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। মানুষ রকেটের সাহায্যে চন্দ্রবিজয়ের গৌরব অর্জন করেছে, বিমান আবিষ্কার করে আকাশ জয় করেছে, বিদ্যুৎ আবিষ্কার করে আঁধার দূর করেছে।
আর টেলিফোন ও মোবাইল ফোন আবিষ্কার করে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করে বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। মানুষের যুগ-যুগান্তরের সাধনা এবং তাদের অবিরাম অধ্যবসায়ই এসব সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে।
অধ্যবসায় এবং জীবনের উন্নয়ন
আমাদের কর্মশীল দৈনন্দিন জীবনে উন্নতি ঘটাতে হলে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। কারণ, কোনো কাজ প্রথমবারেই সফল হবে, এই কথা কখনোই নিশ্চিত করে বলা যায় না, আর তা আশা করাও একরকম বোকামি। একবার সফল না হলে বারবার চেষ্টা করাই হলো জীবনে উন্নয়নের পথকে সুগম করার একমাত্র রাস্তা।
অধ্যবসায়হীন মানুষের অবস্থা
যাদের জীবনে অধ্যবসায় নেই, তাদের জীবন ব্যর্থতায় পূর্ণ হয়ে যায়। শত শত মানুষের জীবন কেবল অধ্যবসায়ের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। পৃথিবীতে কোনো কাজই কিন্তু সহজ নয়। যেকোনো কাজ প্রাথমিক অবস্থায় কঠিন বলেই মনে হয়। কর্মক্ষেত্রে নানা প্রকার বাধাবিপত্তি আসবেই।
তবে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কাজে এগিয়ে গেলে হাজারো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। অধ্যবসায়হীন মানুষ জীবনে সাফল্য লাভ করতে ব্যর্থ হয় এবং একসময় তাদের অস্তিত্বই যেন বিলীন হয়ে যায়। একমাত্র অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষ পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করতে পারে।
অধ্যবসায়ের প্রতিবন্ধকতা
অধ্যবসায়ের মূল প্রতিবন্ধকতা হলো আলস্য। এর পাশাপাশি সৎসাহস ও মনোযোগের (মনোসংযোগের) অভাবও অধ্যবসায়ের পথে বাধা সৃষ্টি করে। আলস্য, সৎসাহস এবং মনোসংযোগে ঘাটতি থাকলে মানুষ সাধনায় মন দিতে পারে না।
অধ্যবসায়ের ক্ষেত্রে ইচ্ছাশক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ, ইচ্ছা থাকলেই যেকোনো সমস্যার সমাধানের কোনো না কোনো উপায় ঠিকই বের হয়ে আসে। কেবল ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমেই মানুষ প্রতিকূল পরিবেশকে নিজের অনুকূলে নিয়ে আসতে পারে।
অধ্যবসায়হীনতার কুফল
কেবল অধ্যবসায়ের অভাবে অনেক সম্ভাবনাময় জীবন অকালে শেষ হয়ে যায়। অধ্যবসায়হীন ব্যক্তিরা পৃথিবীর কোনো কাজেই সফলতা লাভ করতে পারে না। ফলে তাদের জীবন ধ্বংস হয়, ব্যর্থ হয়। একসময় তাদের স্মৃতি বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে যায় এবং সমাজের চোখে তাদের ঠিকানা হয় যেন আবর্জনার স্তূপ বা আস্তাকুঁড়ে।
অধ্যবসায়ের প্রতিবন্ধকতা
অধ্যবসায়ের মূল প্রতিবন্ধকতা হলো আলস্য। এর পাশাপাশি সৎসাহস ও মনোযোগের (মনোসংযোগের) অভাবও অধ্যবসায়ের পথে বাধা সৃষ্টি করে। আলস্য, সৎসাহস এবং মনোসংযোগে ঘাটতি থাকলে মানুষ সাধনায় মন দিতে পারে না।
অধ্যবসায়ের ক্ষেত্রে ইচ্ছাশক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ, ইচ্ছা থাকলেই যেকোনো সমস্যার সমাধানের কোনো না কোনো উপায় ঠিকই বের হয়ে আসে। কেবল ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমেই মানুষ প্রতিকূল পরিবেশকে নিজের অনুকূলে নিয়ে আসতে পারে।
অধ্যবসায়ের অভাবে কী হয়
সাধারণত অধ্যবসায়ের অভাবেই আমরা বহু ক্ষেত্রে সফল হতে পারি না। যদি আমরা লক্ষ্য করি, তবে দেখব যে একটি শিশুও বারবার চেষ্টা করে প্রথমে দাঁড়াতে শেখে, কথা বলতে শেখে, তারপর চলতে শেখে। পরবর্তীতে আরও অনেক কিছু সে এইভাবেই চেষ্টা করে শেখে।
যদি শিশুটি কয়েকবার বিফল হয়েই চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকত, তবে সে জীবনে কখনোই কোনো কিছু শিখতে বা সম্পন্ন করতে পারত না। ঠিক তেমনি, কোনো ছাত্র বা ছাত্রী যদি প্রথম বা দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় ব্যর্থ বা অকৃতকার্য হয়ে অঙ্ক করা থেকে হাত গুটিয়ে বসে থাকে, তবে জীবনে সে আর কখনো অঙ্ক কষতে পারবে না, উল্টে অঙ্ককে ভয় করবে।
অধ্যবসায়হীন মানুষের অবস্থা
যাদের জীবনে অধ্যবসায় নেই, তাদের জীবন ব্যর্থতায় পূর্ণ হয়ে যায়। শত শত মানুষের জীবন কেবল অধ্যবসায়ের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। পৃথিবীতে কোনো কাজই কিন্তু সহজ নয়। যেকোনো কাজ প্রাথমিক অবস্থায় কঠিন বলেই মনে হয়। কর্মক্ষেত্রে নানা প্রকার বাধাবিপত্তি আসবেই।
তবে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কাজে এগিয়ে গেলে হাজারো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। অধ্যবসায়হীন মানুষ জীবনে সাফল্য লাভ করতে ব্যর্থ হয় এবং একসময় তাদের অস্তিত্বই যেন বিলীন হয়ে যায়। একমাত্র অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষ পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করতে পারে।
অধ্যবসায়ী মহাপুরুষ
যাঁরা প্রেম, করুণা ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে নিজ জাতিকে ভালোবেসেছেন এবং লাঞ্ছনা, গঞ্জনা সহ্য করেও নিজেদের কর্তব্য পালনে অটল ছিলেন, তাঁরাই হলেন প্রকৃত মহাপুরুষ।
এর এক উজ্জ্বল উদাহরণ হলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারের সময় অসহনীয় নির্যাতন বারবার সহ্য করে গেছেন। তবুও তিনি ধর্ম প্রচার থেকে বিরত হননি, যার ফলস্বরূপ তিনি অক্ষয়কীর্তি লাভ করেছেন।
অধ্যবসায়ই সাফল্যের চাবিকাঠি
যেকোনো কাজে সফলতা অর্জনের জন্য অধ্যবসায় একান্ত প্রয়োজন। অধ্যবসায় ছাড়া কোনো কাজেই সফল হওয়া যায় না। ইতিহাসের পাতায় যাঁরা আজও অমর হয়ে আছেন, তাঁরা কেবল অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই সফল হতে পেরেছিলেন।
তাঁরা ব্যর্থতাকে জয় করে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়কেই জীবনের একমাত্র সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ডের সঙ্গে ছয়বার যুদ্ধে হেরে গিয়ে মন খারাপ করে বন-জঙ্গলে ঘুরছিলেন।
একদিন এক গুহার মধ্যে তিনি একটি মাকড়সাকে সাতবার চেষ্টা করে সুতো জড়াতে দেখে অনুপ্রাণিত হন। এই অদম্য উৎসাহ নিয়ে তিনি সপ্তমবারের মতো শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং নিজের দেশকে স্বাধীন করেন।
আবার, মহাকবি ফেরদৌসী দীর্ঘ তিরিশ বছর সাধনা করে রচনা করেছিলেন তাঁর অমর মহাকাব্য ‘শাহনামা’। সুতরাং বলা যায়, একমাত্র অধ্যবসায়ই মানবজীবনে সোনালি অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে এবং অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে।
আমাদের জীবনে শিক্ষণীয় দিক
অধ্যবসায় এমন একটি গুণ, যা ছোটবেলা থেকেই গড়ে তোলা উচিত। ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত পড়াশোনার মাধ্যমে অধ্যবসায়ের চর্চা করা দরকার। খেলোয়াড়দের প্রতিদিন অনুশীলনের মাধ্যমে এই গুণ গড়ে তুলতে হয়। শিল্পী, সংগীতজ্ঞ বা সাহিত্যিকদেরও প্রতিদিন কাজ করার মাধ্যমে এই গুণ অর্জন করতে হয়।
জীবনে কোনো কিছুই সহজে পাওয়া যায় না। কেবল অধ্যবসায়ই কঠিন কাজকে সহজ করে তোলে। তাই, আমাদের প্রত্যেকের উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অধ্যবসায়কে অভ্যাসে পরিণত করা।
উপসংহার
সবশেষে বলা যায়, অধ্যবসায় হলো জীবনের সোনার চাবিকাঠি। আমাদের প্রতিভা, যোগ্যতা বা জ্ঞান যত বড়ই হোক না কেন, অধ্যবসায় ছাড়া তার কোনো মূল্য নেই। ইতিহাসে যেসব মহাপুরুষ সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছেন, তাঁরা সবাই অধ্যবসায়কে নিজেদের প্রধান অবলম্বন করেছিলেন।
ব্যর্থতাকে ভয় না করে, ধৈর্য ধরে নিরন্তর চেষ্টা করাই সফলতার আসল রহস্য। তাই ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের অধ্যবসায়ী হওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, অধ্যবসায়ী মানুষই সত্যিকার অর্থে জীবনের প্রকৃত বিজয়ী।