কোণ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি? চিত্র সহ
গণিত এমন একটি বিষয় যা আমাদের চারপাশের প্রতিটি জিনিসের সাথে গভীরভাবে জড়িত। প্রকৃতিতে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন আকৃতি, রেখা ও অবস্থান পরিবর্তন লক্ষ্য করি। এগুলো বোঝার জন্য গণিতে জ্যামিতি নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা রয়েছে। জ্যামিতির মূল উপাদান হলো বিন্দু, সরলরেখা, তল এবং কোণ। এর মধ্যে কোণ এমন একটি মৌলিক ধারণা যা জ্যামিতি ছাড়াও জীবনের বিভিন্ন কাজেও বহুল ব্যবহৃত হয়। এই লেখায় আমরা কোণ সম্পর্কে মৌলিক ধারণা জানবো। এছাড়া বাস্তব উদাহরণসহ জানবো কোণ কত প্রকার ও কি কি।
আরও পড়ুনঃ ৩য় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় গাইড PDF ডাউনলোড
কোণ কাকে বলে?
দুটি রেখা বা রেখাংশ যখন একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে এসে মিলিত হয়, তখন সেখানে একটি নতুন জ্যামিতিক রূপ তৈরি হয়, যাকে আমরা কোণ বলি। সহজ কথায়, দুটি সরলরেখা যদি একে অপরকে ছেদ করে বা একই বিন্দু থেকে শুরু হয়, তবে সেই মিলিত বিন্দুতেই কোণের সৃষ্টি হয়। এই ছেদ বিন্দুতে মোট চারটি পৃথক কোণ গঠিত হতে পারে, কারণ রেখাগুলো দুইদিকে বিস্তৃত থাকে।
আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, দুটি রশ্মি যদি একই প্রান্তবিন্দু থেকে উদ্ভূত হয় বা সেই বিন্দুতে এসে যুক্ত হয়, তবে সেখানেই একটি কোণ তৈরি হয়। সেই মিলনবিন্দু থেকে রশ্মিগুলো দুই দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের মধ্যবর্তী ফাঁকটাই কোণ হিসেবে গণ্য হয়। তাই দুই রশ্মির যৌথ প্রান্তবিন্দুকে কোণের শীর্ষ বা vertex বলা হয়, আর রশ্মিদ্বয়কে কোণের বাহু বলা হয়।
এছাড়া, রেখাংশের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। দুটি রেখাংশ যখন তাদের প্রান্তবিন্দু মিলিয়ে যুক্ত হয়, তখনও একটি কোণের উদ্ভব ঘটে। অর্থাৎ, রেখাংশ বা সরলরেখা যাই হোক, যখনই দুটি রেখা কোনো সাধারণ বিন্দুতে এসে যুক্ত হয়, সেখানেই কোণ সৃষ্টি হয়। আর দুটি রেখা পরস্পরকে অতিক্রম করে ছেদ করলে সেক্ষেত্রে ছেদ বিন্দুর চারপাশে মোট চারটি কোণ তৈরি হয়।
কোণের বৈশিষ্ট্য সমূহ কী কী?
কোণের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। এখন আপনাদেরকে সেই বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে জানাবো আমরা। নিচে কোণের বৈশিষ্ট্য গুলো তুলে ধরা হলোঃ
- কোণ দুইটি রশ্মি বা রেখাংশ দ্বারা গঠিত।
- কোণের সাধারণ প্রান্তবিন্দুকে শীর্ষ বলা হয়।
- কোণ ডিগ্রি বা রেডিয়ানে পরিমাপ করা হয়।
- কোণ সাধারণত ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে মাপা হয়।
- কোণের পরিমাপ ০° থেকে ৩৬০° পর্যন্ত হতে পারে।
- দুই কোণের যোগফল নতুন কোণ তৈরি করে।
- সরল রেখা ১৮০° কোণ তৈরি করে।
- পূর্ণ ঘূর্ণন ৩৬০° কোণ তৈরি করে।
- সম্পূরক কোণের যোগফল ৯০°।
- পরিপূরক কোণের যোগফল ১৮০°।
- ছেদ করা রেখা চারটি কোণ তৈরি করে।
- সমান্তরাল রেখা ও ছেদকের ফলে বিভিন্ন বিশেষ কোণ তৈরি হয়।
- কোণ আকৃতি, গঠন ও পরিমাপ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার হতে পারে।
কোণ কত প্রকার ও কি কি?
কোণকে নির্দিষ্টভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা কিছুটা জটিল হলেও, এর আকৃতি, গঠন এবং পরিমাপের ভিন্নতার ভিত্তিতে আমরা কোণকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করতে পারি। নিচে সেই ভিত্তিগুলো অনুসারে কোণের প্রকারসমূহ তুলে ধরা হলোঃ
শুন্যকোণ: যখন কোণের দুটি রেখাংশ বা বাহু একটি আরেকটির উপর সম্পূর্ণভাবে অবস্থান করে এবং তাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব বা ঘূর্ণন থাকে না, তখন তাকে শুন্যকোণ বলে। এর পরিমাপ ০° বা শূন্য ডিগ্রি।

সূক্ষ্মকোণ: যে কোণের পরিমাপ ০° অপেক্ষা বড় কিন্তু ৯০° অপেক্ষা ছোট, তাকে সূক্ষ্মকোণ বলে।

সমকোণ: যে কোণের পরিমাপ ঠিক ৯০°, তাকে সমকোণ বলে। দুটি রেখাংশ পরস্পর লম্বভাবে থাকলে সমকোণ তৈরি হয়।

স্থূলকোণ: যে কোণের পরিমাপ ৯০° অপেক্ষা বড় কিন্তু ১৮০° অপেক্ষা ছোট, তাকে স্থূলকোণ বলে।

সরলকোণ: যখন কোণের দুটি বাহু পরস্পরের বিপরীত দিকে একটি সরলরেখা বরাবর অবস্থান করে, তখন তাদের মধ্যবর্তী কোণকে সরলকোণ বলে। এর পরিমাপ ঠিক ১৮০°।

প্রবৃদ্ধ কোণ: যে কোণের পরিমাপ ১৮০° অপেক্ষা বড় কিন্তু ৩৬০° অপেক্ষা ছোট, তাকে প্রবৃদ্ধ কোণ বলে। এটি মূলত কোণের বাইরের দিকের পরিমাপ।

পূর্ণ কোণ: যখন কোণের একটি বাহু সম্পূর্ণ একবার ঘুরে এসে আবার প্রাথমিক অবস্থানে ফিরে আসে, তখন উৎপন্ন কোণকে পূর্ণ কোণ বলে। এর পরিমাপ ঠিক ৩৬০°।

পূরক কোণ: যখন দুটি কোণের পরিমাপের যোগফল ৯০° হয়, তখন কোণ দুটির একটিকে অপরটির পূরক কোণ বলে।

সম্পূরক কোণ: যখন দুটি কোণের পরিমাপের যোগফল ১৮০° হয়, তখন কোণ দুটির একটিকে অপরটির সম্পূরক কোণ বলে।

সন্নিহিত কোণ: যদি দুটি কোণের একই শীর্ষবিন্দু থাকে এবং তাদের একটি সাধারণ বাহু থাকে, তবে কোণ দুটিকে সন্নিহিত কোণ বলে। কোণগুলো সাধারণ বাহুর দু’পাশে অবস্থান করে।

অন্তঃস্থ কোণ: যে কোনো ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ বা বহুভুজের ভেতরের দিকে বা অভ্যন্তরে যে কোণ তৈরি হয় তাকে অন্তঃস্থ কোণ বলা হয়। [অন্তঃস্থ কোণ ও বহিঃস্থ কোণ এর ছবি একসাথে দেয়া আছে]

বহিঃস্থ কোণ: যে কোনো ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ বা বহুভুজের একটি বাহুকে বাড়ালে যে কোণ বাহিরের দিকে সৃষ্টি হয় তাকে বহিঃস্থ কোণ বলে।
দৈনন্দিন জীবনে কোণের ব্যবহারঃ
বিভিন্ন ধরনের কোণ আমাদের চারপাশের প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যমান, এবং প্রতিটি কোণই দৈনন্দিন জীবনে কোনো না কোনোভাবে ভূমিকা পালন করে। ছোট শিক্ষার্থীরা তাদের আশেপাশের প্রতিটি বস্তু যেমন – দরজা, জানালা, রাস্তার মোড় কিংবা খেলনার গঠন; এসবের মধ্যেই কোণের উপস্থিতি খুঁজে পেতে পারে। স্থপতি ও প্রকৌশলীরা ঘরবাড়ি, সেতু, মেশিন, রাস্তা কিংবা বড় বড় বিল্ডিং নির্মাণের সময় নির্দিষ্ট কোণের হিসাব ব্যবহার করে কাঠামোকে নিরাপদ ও সুন্দর করে তোলেন।
ক্রীড়া ক্ষেত্রেও কোণের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি খেলাই কার্যত কোণের উপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ক্রিকেটে একজন ব্যাটসম্যান সঠিক কোণে ব্যাট চালাতে পারলেই বলকে দূরে পাঠানো সহজ হয়।
কারিগর ও শিল্পীরাও কোণের উপর নির্ভরশীল। আসবাবপত্র নির্মাণকারী ছুতার টেবিল, চেয়ার, আলমারি কিংবা সোফার প্রতিটি অংশ তৈরিতে নির্দিষ্ট কোণ মানেন। ফ্যাশন ডিজাইনাররা পোশাকের কাটিং ও প্যাটার্ন তৈরির ক্ষেত্রেও কোণের ভূমিকা ব্যবহার করেন।
ভূগোলে পৃথিবীর যেকোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয় করা হয় অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের মাধ্যমে, যা আসলে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে পরিমাপ করা কোণ। জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে গ্রহ নক্ষত্রের ঘূর্ণন, কক্ষপথ এবং বিভিন্ন মহাজাগতিক অবস্থানও কোণ ব্যবহার করে নির্ধারণ করা হয়।
FAQs
৬০ ডিগ্রি কোণকে কী কোণ বলে?
সুক্ষ্মকোণ হলো সেই ধরনের কোণ যার মান ৯০° এর চেয়ে ছোট। অর্থাৎ, যদি কোন কোণ ০° থেকে ৮৯° এর মধ্যে হয়, সেটিকে সুক্ষ্মকোণ বলা হয়। যেহেতু ৬০° কোণ ৯০° এর চেয়ে ছোট, তাই এটি সুক্ষ্মকোণ।
৬০ ডিগ্রি কোণের সম্পূরক কোণ কত?
৬০° কোণের সম্পূরক কোণ বের করার জন্য প্রথমে আমাদের জানতে হবে সম্পূরক কোণ কী। সম্পূরক কোণ হলো দুটি কোণ যাদের যোগফল ৯০° হয়। অর্থাৎ, যদি দুটি কোণ একে অপরের সাথে মিলে ৯০° হয়, তাহলে একটিকে অন্যটির সম্পূরক কোণ বলা হয়। ৬০° কোণের ক্ষেত্রে, তার সম্পূরক কোণ বের করতে আমরা ৯০° থেকে ৬০° বিয়োগ করি।