ভগ্নাংশ কাকে বলে? ভগ্নাংশ কত প্রকার ও কী কী?

ভগ্নাংশ গণিতের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ধারণা। ভগ্নাংশের মাধ্যমে গণিতের বহু জটিল সমস্যা সহজে সমাধান করা সম্ভব। শুধু পাঠ্যবইয়েই নয়, দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন হিসাব নিকাশ ও বাস্তব সমস্যার সমাধানেও ভগ্নাংশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আর্টিকেলে আমরা ভগ্নাংশ কাকে বলে এবং এর মৌলিক ধারণা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই ভগ্নাংশ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে চাইলে পুরো লেখাটি মনোযোগসহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।

আরও পড়ুনঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

ভগ্নাংশ কাকে বলে? 

ভগ্নাংশ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত ভাষা থেকে এবং এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Fraction। বাংলায় ‘ভগ্নাংশ’ শব্দটি দুটি অংশ নিয়ে গঠিত – ‘ভগ্ন’ এবং ‘অংশ’। ভগ্নাংশ হলো এমন একটি সংখ্যা যা কোনো সম্পূর্ণ বস্তুর ভাগ বা অংশ নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি রুটি চার সমান অংশে ভাগ করা হয়, এবং আমরা তার এক অংশ নিই, তবে সেই অংশটিকে বলা হবে রুটির একটি ভগ্নাংশ। তাই ভগ্নাংশের মাধ্যমে আমরা কোনো সম্পূর্ণ বস্তুকে ছোট ছোট সমান বা অসমান ভাগে ভাগ করে তার হিসাব করতে পারি। 

ভগ্নাংশ কত প্রকার ও কী কী

এখানে ভগ্নাংশের প্রকারভেদ গুলো নিচে সংজ্ঞাসহ দেওয়া হলোঃ 

সাধারণ ভগ্নাংশ: লব হরের চেয়ে ছোট ভগ্নাংশকে সাধারণ ভগ্নাংশ বলা হয়।

প্রকৃত ভগ্নাংশ: সম্পূর্ণ ভগ্নাংশের একটি ধরন, যেখানে লব হরের চেয়ে ছোট এবং মান ১ এর চেয়ে কম।

অপ্রকৃত ভগ্নাংশ: লব হরের সমান বা বড় হলে তাকে অপ্রকৃত ভগ্নাংশ বলা হয়।

মিশ্র ভগ্নাংশ: একটি পূর্ণসংখ্যা ও সাধারণ ভগ্নাংশের সমন্বয়ে গঠিত ভগ্নাংশ।

দশমিক ভগ্নাংশ: হর ১০, ১০০ বা তার বেশি এবং দশমিক বিন্দুর মাধ্যমে লেখা ভগ্নাংশ।

একক ভগ্নাংশ: লব ১ এবং হর যেকোনো ধনাত্মক সংখ্যার ভগ্নাংশকে একক ভগ্নাংশ বলে।

যৌগিক ভগ্নাংশ: একটি ভগ্নাংশের লব বা হর অন্য ভগ্নাংশ দিয়ে গঠিত হলে তাকে যৌগিক ভগ্নাংশ বলে।

ভগ্নাংশের বৈশিষ্ট্য সমুহঃ 

ভগ্নাংশের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে ভগ্নাংশকে সহজে চেনা ও ব্যবহার করা যায়। ভগ্নাংশের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে আলোচনা করা হলোঃ 

১. ভগ্নাংশ দুটি অংশ নিয়ে গঠিত – লব ও হর।

২. লব ভগ্নাংশের উপরের সংখ্যা এবং হর নিচের সংখ্যা।

৩. হর কখনো শূন্য হতে পারে না।

৪. ভগ্নাংশ একটি সম্পূর্ণ বস্তুর অংশকে নির্দেশ করে।

৫. লব ও হরকে একই সংখ্যা দ্বারা গুণ বা ভাগ করলে ভগ্নাংশের মান অপরিবর্তিত থাকে।

৬. একই মানের একাধিক ভগ্নাংশ থাকতে পারে, যাদেরকে সমান ভগ্নাংশ বলে।

৭. ভগ্নাংশ সাধারণ, অপ্রকৃত বা মিশ্র আকারে প্রকাশ করা যায়।

৮. ভগ্নাংশকে দশমিক আকারেও প্রকাশ করা সম্ভব।

৯. ভগ্নাংশের সাহায্যে ভাগ, গুণ, যোগ ও বিয়োগ করা যায়।

১০. দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন হিসাব-নিকাশে ভগ্নাংশের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। 

ভগ্নাংশের যোগফল, বিয়োগফল, গুণফল, ভাগফলঃ 

fraction details

ভগ্নাংশের যোগফল

ভগ্নাংশের যোগফল বলতে দুই বা ততোধিক ভগ্নাংশকে একত্রে যোগ করে একটি নতুন ভগ্নাংশ বা সংখ্যা নির্ণয় করাকে বোঝায়। ভগ্নাংশের যোগ করার নিয়ম ভগ্নাংশের হরের উপর নির্ভর করে। হর সমান হলে যোগ করা সহজ হয়, আর হর ভিন্ন হলে প্রথমে হর সমান করতে হয়। যদি ভগ্নাংশগুলোর হর একই হয়, তবে শুধু লবগুলো যোগ করে হর অপরিবর্তিত রাখা হয়। কিন্তু যদি ভগ্নাংশগুলোর হর ভিন্ন হয়, তাহলে প্রথমে ল.সা.গু ব্যবহার করে হর সমান করতে হয়। এরপর সমমানের ভগ্নাংশে রূপান্তর করে লবগুলো যোগ করা হয়।

ভগ্নাংশের বিয়োগফল

ভগ্নাংশের বিয়োগ করার পদ্ধতিও যোগের মতোই হরের উপর নির্ভর করে।যদি বিয়োগ করতে হওয়া ভগ্নাংশগুলোর হর সমান হয়, তবে শুধু লবের বিয়োগ করতে হয় এবং হর অপরিবর্তিত থাকে।  কিন্তু যদি ভগ্নাংশগুলোর হর ভিন্ন হয়, তাহলে প্রথমে ল.সা.গু নির্ণয় করে হর সমান করতে হয়। এরপর সমমানের ভগ্নাংশে রূপান্তর করে লবের বিয়োগ করা হয়। 

ভগ্নাংশের গুণফল

ভগ্নাংশের গুণ করার নিয়ম যোগ বা বিয়োগের তুলনায় সহজ, কারণ এখানে হর সমান করার প্রয়োজন হয় না। ভগ্নাংশের গুণফল নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে সব ভগ্নাংশের লবগুলো একে অপরের সঙ্গে গুণ করা হয় এবং এরপর হরগুলো একে অপরের সঙ্গে গুণ করা হয়। পরে প্রাপ্ত ভগ্নাংশটি প্রয়োজনে সরলীকরণ করা হয়। 

ভগ্নাংশের ভাগফল

ভগ্নাংশের ভাগ করার নিয়ম তুলনামূলকভাবে সহজ, তবে এখানে একটি বিশেষ বিষয় মনে রাখতে হয়। ভগ্নাংশের ভাগফল নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে ভাগকারী ভগ্নাংশের বিপরীত ভগ্নাংশ নিতে হয়। ভাগকারী ভগ্নাংশের লব ও হর অদলবদল করা হয়। এরপর ভাজ্য ভগ্নাংশের সঙ্গে সেই বিপরীত ভগ্নাংশকে গুণ করতে হয়। 

FAQs

মিশ্র ভগ্নাংশকে অপ্রকৃত ভগ্নাংশে রূপান্তরিত করার সময় হরের কী পরিবর্তন হয়?

মিশ্র ভগ্নাংশকে অপ্রকৃত ভগ্নাংশে রূপান্তর করার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হরের কোনো পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ, মিশ্র ভগ্নাংশে যে হর ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিই রূপান্তরের পরও অপরিবর্তিত থাকে। হর মূলত নির্দেশ করে একটি সম্পূর্ণ বস্তু কত সমান ভাগে বিভক্ত হয়েছে। এই কারণেই হর কখনো পরিবর্তিত হয় না, এবং তা অপ্রকৃত ভগ্নাংশে রূপান্তরের সময়ও একই থাকে।

যে ভগ্নাংশের লব বড়, হর ছোট তাকে কী ভগ্নাংশ বলে?

যে ভগ্নাংশের লব হরের চেয়ে বড় হয়, তাকে অপ্রকৃত ভগ্নাংশ বলা হয়। অন্য কথায়, অপ্রকৃত ভগ্নাংশ এমন একটি ভগ্নাংশ যার মান একের চেয়ে বড় বা সমান হয়। এই ধরনের ভগ্নাংশে লব হরের তুলনায় বেশি হওয়ায় এটি সম্পূর্ণ সংখ্যার চেয়ে বড় অংশকে নির্দেশ করে। অপ্রকৃত ভগ্নাংশকে আমরা চাইলে মিশ্র ভগ্নাংশ আকারেও প্রকাশ করতে পারি।

হর একই হলে কোন ভগ্নাংশটি ছোট?

যদি দুটি ভগ্নাংশের হর একই হয়, তাহলে কোন ভগ্নাংশ বড় বা ছোট তা নির্ধারণ করা হয় লব এর মানের উপর ভিত্তি করে। হর সমান থাকলে লব যত ছোট হবে, ভগ্নাংশ তত ছোট হবে এবং লব যত বড় হবে, ভগ্নাংশ তত বড় হবে। 

পরিশেষে

গণিতের প্রতিটি ধাপে ভগ্নাংশ একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। তাই ভগ্নাংশ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে রাখা জরুরি। আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে ভগ্নাংশের ধারণা পরিস্কার হয়েছে। এখানে আমরা ভগ্নাংশ এবং প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছি।