রেখা কাকে বলে চতুর্থ শ্রেণি? রেখা কত প্রকার ও কী কী?

রেখা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্যামিতিক ধারণা, যার শুধু দৈর্ঘ্য থাকে; প্রস্থ বা উচ্চতা নেই। এটি সোজা ও মাত্রাহীন এক বিস্তৃতি, যা দুই দিকেই অসীমভাবে ছড়িয়ে থাকে। অর্থাৎ রেখার কোনো নির্দিষ্ট শুরু বা শেষ নেই। অনেকগুলো বিন্দু এক সরল পথে ধারাবাহিকভাবে সাজালে একটি রেখা গঠিত হয়। 

বিন্দু কেবলমাত্র দৈর্ঘ্যের দিকে অগ্রসর হতে পারে বলেই এমন একটি আকৃতি তৈরি হয়, যাকে রেখা বলা হয়। তাই যেকোনো জ্যামিতিক গঠনে যেখানে শুধুই দৈর্ঘ্য বিদ্যমান এবং অন্য কোনো মাত্রা নেই, সেখানেই রেখার সৃষ্টি ঘটে।

আরও পড়ুনঃ এক কথায় প্রকাশ চতুর্থ শ্রেণি

রেখা কত প্রকার ও কী কী? 

রেখা গণিত এবং জ্যামিতির একটি মৌলিক ধারণা। এটি কত প্রকার, তা নির্ভর করে আপনি কোন প্রেক্ষাপটে আলোচনা করছেন তাঁর উপর। রেখাকে সাধারণত তার আকৃতি এবং অবস্থান অনুসারে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। নিচে রেখার প্রতিটি ভাগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলোঃ 

  • সরলরেখা 

সরলরেখা হলো সেই রেখা, যা আঁকার সময় কোনো বাঁক নেয় না এবং সব সময় সোজা পথে চলে। আপনি যখন স্কেল ব্যবহার করে পেন্সিল টানেন, তখন যে সোজা রেখাটি তৈরি হয়, সেটাই সরলরেখা। এটি দুটি বিন্দুর মধ্যে সবচেয়ে কম দূরত্বের পথ। সরলরেখার সব অংশই সমানভাবে সোজা।

  • বক্ররেখা 

বক্ররেখা হলো সেই রেখা, যা আঁকার সময় বাঁকা বা ঢেউ খেলানো হয় এবং বারবার তার দিক পরিবর্তন করে। এই রেখা কখনোই সোজা হয় না। আপনি হাত দিয়ে স্কেল ছাড়া যখন কোনো রেখা আঁকেন যা গোল হয়ে যায় বা এঁকে-বেঁকে যায়, সেটাই বক্ররেখা।

  • সমান্তরাল রেখা 

একই সমতলে অবস্থিত দুটি সরলরেখা যদি পরস্পরের থেকে সর্বদা সমান দূরত্বে থাকে এবং তারা কখনোই একে অপরের সঙ্গে মিলিত না হয়, তবে তাদের সমান্তরাল রেখা বলে। দুটি রেখা যা সবসময় পাশাপাশি চলে, কিন্তু যতই দূরে যাক না কেন, তারা কখনোই একে অপরকে ছুঁয়ে ফেলে না বা কাটাকাটি করে না।

  • ছেদক রেখা

দুটি বা তার বেশি রেখা যদি একটি নির্দিষ্ট সাধারণ বিন্দুতে এসে পরস্পরকে কেটে দেয় বা মিলিত হয়, তবে তাদের ছেদক রেখা বলে। দুটি রাস্তা যেখানে এসে একে অপরের সঙ্গে মিশে গিয়ে একটি ‘X’ বা ‘+’ চিহ্নের মতো তৈরি করে। রেখাগুলো একে অপরের মধ্য দিয়ে চলে যায়।

  • লম্ব রেখা 

দুটি রেখা যদি একে অপরের সঙ্গে ঠিক ৯০ ডিগ্রি বা সমকোণ কোণে ছেদ করে, তবে তাদের লম্ব রেখা বলে। যখন দুটি সোজা রেখা এমনভাবে মেশে যে কোনাগুলো একদম খাড়া বা সোজা দেখায়।

রেখার বৈশিষ্ট্যসমূহঃ  

রেখার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ 

  • রেখার কেবল দৈর্ঘ্য বিদ্যমান, প্রস্থ বা উচ্চতা নেই। 
  • এটির কোনো শুরু বা শেষ বিন্দু নির্দিষ্ট করে থাকে না। 
  • রেখা হলো অসংখ্য বিন্দুর একটি নিরবচ্ছিন্ন ও ধারাবাহিক সমষ্টি। 
  • একটি রেখা সম্পূর্ণ সোজা অথবা বাঁকা পথ অনুসরণ করতে পারে। 
  • সরলরেখা সর্বদা দুটি বিন্দুর মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব বোঝায়। 
  • দুটি নির্দিষ্ট বিন্দুর মধ্য দিয়ে কেবল একটি সরলরেখা আঁকা যায়। 
  • রেখার অবস্থান সর্বদা একটি সমতলে নির্ধারিত হয়ে থাকে। 
  • জ্যামিতিতে রেখা সম্পূর্ণভাবে পুরুত্বহীন, তার কোনো গভীরতা নেই।

দৈনন্দিন জীবনে রেখার গুরুত্বঃ 

importance of line

রেখা শুধু গণিতের একটি ধারণা নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজে এর ব্যবহার রয়েছে। আমরা যে পৃথিবীতে চলছি, ঘরবাড়ি বানাচ্ছি, পোশাক ডিজাইন করছি বা রাস্তা-ঘাটে চলাফেরা করছি; প্রতিটি ক্ষেত্রেই রেখার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ঘর নির্মাণে মাপজোক, সোজা দেয়াল, দরজা-জানালা তৈরি করতে রেখা ব্যবহার করা হয়। 

রাস্তার মাঝের সাদা বা হলুদ দাগ গাড়ি চলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে, যা আসলে রেখারই ব্যবহার। শিল্পকলা, অঙ্কন বা ডিজাইনেও বিভিন্ন ধরনের রেখা দিয়ে আকৃতি ও নকশা তৈরি করা হয়। এমনকি পোশাকে সেলাই, কাগজ কেটে সোজা করা, বইয়ের প্রান্ত ঠিক রাখা – এসব ক্ষেত্রেও রেখা গুরুত্বপূর্ণ। 

FAQs

রেখা কীভাবে তৈরি হয়?

রেখা অনেকগুলো বিন্দু এক সরল পথে ধারাবাহিকভাবে সাজালে তৈরি হয়। যখন বিন্দুগুলো একই দিক ধরে একের পর এক অবস্থান করে, তখন তারা মিলেই একটি সোজা বা বাঁকা রেখার সৃষ্টি করে। অর্থাৎ বিন্দুর ধারাবাহিক বিস্তারই রেখাকে গঠন করে।

রেখা কেন কেবল দৈর্ঘ্যের দিকেই বিস্তৃত থাকে?

রেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এটির মাত্র একটি মাত্রা আছে, আর সেটি হলো দৈর্ঘ্য। রেখার কোনো প্রস্থ বা উচ্চতা নেই। তাই এটি যে দিকেই ছড়ায়, তা শুধুই দৈর্ঘ্যের দিক। রেখা অনেকগুলো বিন্দুর ধারাবাহিক বিস্তার থেকে তৈরি হয়। যখন বিন্দুগুলো একই দিক ধরে অসীম পর্যন্ত প্রসারিত হয়, তখন তা শুধুই দৈর্ঘ্যের বিস্তার তৈরি করে, অন্য কোনো মাত্রা নয়।

রেখা দিয়ে কী কী আকৃতি তৈরি করা যায়?

রেখা বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতির মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। বিভিন্নভাবে রেখাকে যুক্ত বা বিন্যস্ত করলে অসংখ্য আকৃতি তৈরি করা যায়। তিনটি সরলরেখা একত্রে যুক্ত হলে ত্রিভুজ তৈরি হয়, আর চারটি রেখা মিলেই চতুর্ভুজ, বর্গ বা আয়তক্ষেত্রের মতো আকৃতি গঠিত হয়। যদিও বৃত্ত নিজে রেখা দিয়ে তৈরি নয়, বৃত্তের ব্যাস বা ব্যাসার্ধ নির্ধারণে রেখার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া বিভিন্ন নকশা, তারা আকৃতি বা ডিজাইনও একাধিক রেখার সমন্বয়ে গঠিত হয়। 

বাঁকা রেখা কি সরলরেখায় রূপান্তর করা সম্ভব? 

না, বাঁকা রেখা কে জ্যামিতিক অর্থে সরাসরি সরলরেখায় রূপান্তর করা সম্ভব নয়। একটি বক্ররেখাকে কেবল তার দৈর্ঘ্য পরিমাপ করে একটি নতুন সরলরেখা হিসেবে আঁকা যেতে পারে, কিন্তু মূল বক্ররেখার জ্যামিতিক আকৃতি এবং বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে সেটিকে সরলরেখায় রূপান্তরিত করা যায় না। রূপান্তর করলে সেটি আর আগের রেখা থাকে না

কোন পরিস্থিতিতে রেখা আঁকা কঠিন হয়ে যেতে পারে?

রেখা আঁকা একটি সহজ কাজ মনে হলেও, কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এটি বেশ কঠিন বা অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। যদি আঁকার স্থানটি অত্যন্ত অসমতল, পিচ্ছিল হয়, তবে সোজা বা নির্ভুল রেখা আঁকা প্রায় অসম্ভব। সম্পূর্ণ অন্ধকারে বা অত্যধিক আলোর প্রতিফলনে রেখাটি কোথায় আঁকা হচ্ছে, তা দেখতে না পাওয়ায় নির্ভুলভাবে আঁকা অসম্ভব হয়ে পড়ে।