শতকরা কাকে বলে? শতকরা নির্ণয়ের সূত্র ও উদাহরণ
গণিত আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেনাকাটা, ফলাফল নির্ণয়, ব্যাংক হিসাব, লাভ ক্ষতি, সুদ হিসাব কিংবা পরীক্ষার নম্বর – প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমরা একটি বিশেষ ধারণার সঙ্গে পরিচিত হই, তা হলো শতকরা। শতকরা এমন একটি গণিতীয় ধারণা, যা কোনো কিছুর অংশকে সহজভাবে প্রকাশ করতে সাহায্য করে। শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক স্তর থেকেই শতকরা শেখানো হয়, কারণ বাস্তব জীবনে এর ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক।
শতকরা, লাভ ক্ষতি ও সুদকষার অসংখ্য অংক কীভাবে মাত্র ১০০% ধারণাটি কাজে লাগিয়ে খুব সহজে এক লাইনে সমাধান করা যায়, এই আলোচনা শেষ পর্যন্ত পড়লে তা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবেন। পাটিগণিতের অধ্যায়গুলোর মধ্যে শতকরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাই এ অধ্যায়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ আসল নির্ণয়ের সূত্র ৫ম শ্রেণি
শতকরা কাকে বলে?
শতকরা হলো এমন একটি অনুপাত, যেখানে কোনো রাশিকে প্রতি ১০০ ভাগে কত অংশ আছে তা প্রকাশ করা হয়। এটি একটি বিশেষ ধরনের ভগ্নাংশ, যার হর সর্বদা ১০০। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। আপনি যদি কখনো বাজারে কোনো পণ্যের ডিসকাউন্ট দেখতে পান, স্কুলের পরীক্ষার ফলাফল জানতে চান, কিংবা সঞ্চয় ও খরচের হিসাব করতে চান, তখন শতকরা গণনা খুবই দরকারি। এটি মূলত কোনো সম্পূর্ণ পরিমাণকে ১০০ ভাগে ভাগ করে তার অংশ কত তা সহজভাবে বোঝাতে সাহায্য করে।
শতকরা হিসাব করার সাধারণ সূত্র কী?
শতকরা (%) = (প্রাপ্ত মান ÷ মোট মান) × ১০০
শতকরা বের করার জন্য প্রথমে প্রাপ্ত মান এবং মোট মান নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ, আপনি যে পরিমাণের শতকরা বের করতে চাইছেন, তার প্রাপ্ত অংশ এবং মোট অংশ ঠিকভাবে জানাতে হবে। এরপর সূত্রে মান বসিয়ে হিসাব শুরু করতে হবে। প্রাপ্ত মানকে মোট মান দ্বারা ভাগ করতে হবে এবং সেই ফলাফলের সাথে ১০০ গুণ করতে হবে। সর্বশেষে প্রাপ্ত ফলাফলকে শতকরা চিহ্ন (%) ব্যবহার করে প্রকাশ করতে হবে। এইভাবে ধাপে ধাপে শতকরা হিসাব করা যায়।
শতকরার সূত্র দিয়ে কয়েকটি অংকঃ
শতকরার সূত্র দিয়ে নিয়মিত অংক অনুশীলন করলে গণিতের প্রতি ভীতি কমে যায় এবং শিক্ষার্থীদের হিসাব করার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। তাই শতকরার সূত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অংক শেখা ও অনুশীলন করা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কয়েকটি অংক অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সূত্রটি ভালোভাবে বুঝতে পারে এবং বাস্তব জীবনের নানা সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়ঃ
অংক – ১
একজন শিক্ষার্থী ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় ১৫০ নম্বর পেয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর শতকরায় কত?
সমাধান:
অংশ = ১৫০
মোট = ২০০
শতকরা = (১৫০ ÷ ২০০) × ১০০
= ০.৭৫ × ১০০
= ৭৫%
উত্তর: ৭৫%
অংক – ২
একটি শ্রেণিতে ৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জন উপস্থিত। উপস্থিতির হার কত শতাংশ?
সমাধান:
অংশ = ৩০
মোট = ৪০
শতকরা = (৩০ ÷ ৪০) × ১০০
= ০.৭৫ × ১০০
= ৭৫%
উত্তর: ৭৫%
অংক – ৩
একজন ব্যবসায়ী ২০০০ টাকার পণ্যে ২৫% লাভ করেছে। লাভের পর বিক্রয়মূল্য কত?
সমাধান:
লাভ = (২৫ ÷ ১০০) × ২০০০
= ৫০০ টাকা
বিক্রয়মূল্য = ২০০০ + ৫০০
= ২৫০০ টাকা
উত্তর: ২৫০০ টাকা
অংক – ৪
একটি স্কুলে মোট ৫০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬০% ছেলে। ছেলের সংখ্যা কত?
সমাধান:
ছেলের সংখ্যা = (৬০ ÷ ১০০) × ৫০০
= ৩০০
উত্তর: ৩০০ জন
দৈনন্দিন জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে শতকরা ব্যবহার করা হয়?

দৈনন্দিন জীবনে শতকরা ব্যবহৃত হয় নানা ক্ষেত্রে। শিক্ষায় পরীক্ষার নম্বর নির্ণয়ে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো পরীক্ষায় যদি একজন শিক্ষার্থী ৮০% নম্বর পায়, তবে তা তার পারফরম্যান্স বোঝায়। ব্যাংক ও অর্থ সম্পর্কিত কাজে শতকরা ব্যবহার করা হয় ঋণ, সঞ্চয় বা সুদ হিসাব করার জন্য।
এছাড়া ক্রয় বিক্রয়েও এটি ব্যবহৃত হয়; যেমন দোকানে ২০% ছাড় পাওয়া গেলে তার অর্থ বোঝা যায় কতটুকু মূল্যের হ্রাস হয়েছে। খেলাধুলায় খেলোয়াড়ের জয় হার বা স্কোরের হিসাবেও শতকরা ব্যবহৃত হয়। মোটকথা, দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব হিসাব নিকাশে শতকরা ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি অংশকে সম্পূর্ণের সাথে তুলনা করার সহজ ও সুস্পষ্ট উপায়।
FAQs
শতকরাকে কেন ভগ্নাংশের একটি বিশেষ রূপ বলা হয়?
শতকরাকে ভগ্নাংশের একটি বিশেষ রূপ বলা হয় কারণ শতকরা মূলত ১০০ কে ভিত্তি ধরে প্রকাশ করা একটি ভগ্নাংশ। যখন আমরা কোনো কিছুকে শতকরা আকারে প্রকাশ করি, তখন আসলে আমরা বোঝাই মোট ১০০ ভাগের মধ্যে কত ভাগ নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি শতকরা মানই সহজে ভগ্নাংশে রূপান্তর করা যায় এবং ভগ্নাংশকেও ১০০ দিয়ে গুণ করলে শতকরা পাওয়া যায়। এই কারণেই শতকরাকে ভগ্নাংশের একটি বিশেষ রূপ বলা হয়।
শতকরা প্রকাশের জন্য কোন প্রতীক ব্যবহৃত হয় এবং সেই প্রতীকটি কী নির্দেশ করে?
শতকরা প্রকাশের জন্য % প্রতীক ব্যবহার করা হয়। এই প্রতীকটি মূলত বোঝায় প্রতি ১০০ বা ১০০ ভাগের মধ্যে কত ভাগ। অর্থাৎ কোনো সম্পূর্ণ পরিমাণকে যদি ১০০টি সমান অংশে ভাগ করা হয়, তবে তার মধ্যে যতগুলো অংশ নেওয়া বা বিবেচনা করা হয়, সেটিই % চিহ্নের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
শূন্য শতাংশের গুরুত্ব কী?
যখন বলা হয় ০%, তখন বোঝায় যে মোটের মধ্যে কোনো অংশই নেই। কোনো পরীক্ষায় ০% নম্বর পাওয়া মানে একটি প্রশ্নও সঠিক হয়নি। আবার কোনো পণ্যে ০% চিনি বা ০% ফ্যাট লেখা থাকলে বোঝায় সেখানে উক্ত উপাদান একেবারেই নেই। শূন্য শতাংশ আমাদের হিসাবকে পরিষ্কার ও নির্ভুল করে।
পরিশেষে
আমরা শতকরা কাকে বলে এবং শতকরা বের করার সহজ পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি এবং বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে দেখিয়েছি কিভাবে এটি সহজে প্রয়োগ করা যায়। শতকরা গণনা কোনও জটিল কাজ নয়; এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সহজ, কার্যকরী এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দক্ষতা। শতকরা গণনায় দক্ষতা অর্জনের জন্য নিয়মিত অনুশীলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যত বেশি আপনি এই প্রক্রিয়ার ওপর প্র্যাকটিস করবেন, ততই এটি আপনার জন্য সহজ হয়ে উঠবে।